—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত বছরও দুর্গাপুজোর পরে সেই আসনেই লক্ষ্মীপুজো হয়েছিল কলা বৌ বসিয়ে। মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে বন্ধ হয়েছে দুর্গাপুজো। লক্ষ্মী পুজোরও আয়োজন হয়নি। পুজোর আগের দিন থেকে বাজার-হাট, পুজোর জায়গায় চালগুঁড়ো দিয়ে আলপনা দেওয়া— সবই নিজের হাতে করত মেয়ে। বাবা বুক ভরে শ্বাস নিতেন। ভাবতেন, এমন নিপুণ হাতে পুজোর আয়োজন করতে পারলে সংসার সুন্দর করে গুছিয়ে তুলতে পারবে।
বাড়ির সামনে দিয়ে পাড়ার লক্ষ্মীপুজোর কলা বৌ নিয়ে যেতে দেখে চোখ ভিজে আসে প্রতিবাদী বৃদ্ধ বাবার। ততক্ষণে মা বলতে শুরু করেছেন, ‘‘আমি পারতাম না এত কিছু মনে রেখে করতে। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, ও-ই করত। বাড়ির পুজোয় কত রকমের খুঁটিনাটি থাকে। ভুলত না কিছু। স্নান সেরে নিজেই সাজাত। কী সুন্দর করে আলপনা দিত!’’ তার পরে একটু চুপ। শেষে নিচু স্বরে বলেন, ‘‘আমার ঘরের লক্ষ্মীই চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। কী করে সেখানে আর পুজো করা যায়?’’
আর জি করে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাড়ি দুর্গাপুজো পার হয়ে লক্ষ্মীপুজোর দিকে যেতে যেতে এমন আঁধারেই ডুবে রয়েছে।
লক্ষ্মীপুজোর দিন বাবা-মা আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে চান। খোঁজখবর নিতে চান তাঁদের। বাবা-মায়ের কথায়, ‘‘প্রতিবাদ তো সত্যকে আড়াল করার বিরুদ্ধে। সেই প্রতিবাদ চলবে। আমাদের এক মেয়েকে হারিয়েছি। আর কাউকে হারাতে পারব না। ওরা যে আমাদের সন্তানসম। ফোনে কথা বলব।’’ যোগ করেন, ‘‘বার বার বলছি, যদি কেউ অসুস্থ বোধ করে, তবে যেন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার জায়গায় অন্য কেউ অনশনে বসবে। রিলে করে চলুক। কিন্তু নিজের চরম কোনও ক্ষতি করে নয়।’’
মঙ্গলবারের পুজো কার্নিভাল নিয়েও একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বাবা-মা। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, ‘‘যারা অনশন করছে, তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলার সময় হচ্ছে না। কিন্তু ওঁর কার্নিভাল করার সময় আছে। ছাত্রছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। বৈঠকে ডাকা হচ্ছে, কিন্তু সহযোগিতা করা হচ্ছে না।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘মানুষ ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি ওদের জয় হবেই।’’ দ্রোহের কার্নিভাল নিয়েও তাঁদের মন্তব্য, ‘‘এ দিন যে দ্রোহের কার্নিভাল হল, এটা মানুষের নৈতিক জয়। এটা মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন বন্ধ করতে, কিন্তু পারেননি।’’
সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানিও ছিল এ দিন। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘পুলিশ এত দিন ধরে পর পর যা যা করেছে এই ঘটনার তদন্তের নামে, সমস্ত কিছুতেই আদালতের কাছে থাপ্পড় খাচ্ছে। এ দিনও তাই হল। প্রথম চার্জশিটেই দেখা গিয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার জড়িত। ভাল পদক্ষেপ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সরকারকে বিবেচনা করতেই হবে।’’
সত্য উদঘাটন হবে এবং দোষীরা নিশ্চিত ভাবে ধরা পড়বে বলেই মনে করছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy