অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি আগামী বুধবার আমেরিকা যেতে পারবেন? কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে সোমবার এই নিয়ে চলল সওয়াল-পর্ব। তবে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিদেশ যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে কোনও ফয়সালা হল না। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা সোমবার হলফনামা দিয়ে হাই কোর্টে জানান অভিষেক। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টে সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চে শুনানি ছিল। সেখানেই ওঠে অভিষেকের বিদেশ যাওয়ার প্রসঙ্গ। ওই শুনানিতে ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, ইডির আইনজীবী এসভি রাজু, মূল মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ ভটাচার্য। শুনানি শুরু হতেই ইডির আইনজীবী ওই বেঞ্চের বিচার্য বিষয় নিয়ে আপত্তি জানান। এর পরেই বিচারপতি ঘোষ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বিষয়টি আর শুনবেন না। মামলাটি তিনি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘বিদেশ যাত্রা নিয়ে অভিষেকের অতিরিক্ত হলফনামা জমা নেওয়া হবে না। এর পর প্রধান বিচারপতিই সিদ্ধান্ত নেবেন, এই মামলার শুনানি কোন বেঞ্চে হবে।’’
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল অভিষেককে। কিন্তু সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা হয়নি। বিচারপতি ঘোষ প্রধান বিচারপতির কাছে মামলাটি পাঠিয়ে ইডির আইনজীবীকে অনুরোধ করেন, নতুন করে মামলাটির শুনানি শুরু না-হওয়া পর্যন্ত যেন অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ না করা হয়। এ ব্যাপারে বিচারপতি ঘোষকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী রাজু।
অন্য দিকে, সোমবারই কয়লা পাচার মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেও অভিষেকের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন তাঁর আইনজীবী। শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, চিকিৎসার জন্য কারও বিদেশযাত্রায় বাধা দেওয়া উচিত নয়, তদন্তের স্বার্থে যত বার প্রয়োজন, তত বার ডাকা যেতে পারে অভিষেককে।
অভিষেক-ঘরনি রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন, সোমবার সে কথা ইডির কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে আদালতে জবাব দিতে হবে।
গত ২১ জুলাই ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে অভিষেক যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে সোমবার হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজেপির আইনজীবী সূর্যনীল দাস। তার প্রেক্ষিতে অভিষেকের ‘বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও’-মন্তব্যে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার অনুমতি দিল। তবে এই মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
বিদেশযাত্রা নিয়ে আর্জি
চিকিৎসার জন্য আগামী বুধবার (২৬ জুলাই) আমেরিকা যেতে চান অভিষেক। কলকাতা হাই কোর্টে সোমবার একটি হলফনামা জমা দিয়ে এই আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেক। ওই হলফনামায় অভিষেক লিখেছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইডিকে তাঁর বিদেশ সফরের কথা বিশদে জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। অভিষেকের দাবি, গত ১৫ জুলাই এই সফরের কথা ইডিকে জানালেও, উল্টো দিক থেকে তার কোনও জবাব আসেনি। সোমবার হাই কোর্টে হলফনামায় অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী ৮ অগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টেয় আমেরিকায় এক জন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। ওই চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৪ দিন তাঁকে আমেরিকায় থাকতে হবে।
রুজিরা, ইডি, সুপ্রিম কোর্ট
অভিষেক-পত্নী রুজিরাকে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন, সোমবার তা ইডির কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। রুজিরার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি হয়েছিল কেন, তা-ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী শুক্রবার ইডিকে এই বিষয়ে আদালতে জবাব দিতে হবে। ওই দিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এই মামলায় ইডির উদ্দেশে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, “তদন্তের প্রয়োজনে বার বার সমন করুন। সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ মতো তদন্ত করতে বাধা কোথায়?” সোমবার বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউলের বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি হয়। বিনা কারণে তাঁকে বিদেশে যেতে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি— এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রুজিরা। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রুজিরার আইনজীবী কপিল সিব্বল। গত ৫ জুন কলকাতা বিমানবন্দরে রুজিরাকে আটকান অভিবাসন দফতরের কর্মীরা। রুজিরার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দুবাইয়ের বিমান ধরার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বিমান ধরার আগেই তাঁকে ‘বাধা’ দেয় অভিবাসন দফতর। বিমানবন্দরে তাঁকে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিসও ধরানো হয়। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যান অভিষেক-ঘরনি।
‘বিজেপির বাড়ি ঘেরাও’ মামলা
ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে ‘বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও’-এর ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক। পরে ওই কর্মসূচি সংশোধন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে দায়ের হয় এফআইআর। তৃণমূল নেত্রী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ওই মন্তব্যে হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজেপি। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার অনুমতি দিল। তবে একই সঙ্গে এই সংক্রান্ত মামলার দ্রুত শুনানির যে আর্জি বিজেপি জানিয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আগামী ৫ অগস্ট থেকে সমস্ত বুথ, অঞ্চল, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতাদের বাড়ি শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘেরাও করতে হবে। তবে বাড়িতে কোনও বৃদ্ধ মানুষ থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। বিজেপি নেতা বাড়ি থেকে বেরোবেনও না, ঢুকবেনও না।’’ তবে একই সঙ্গে দলের সদস্যদের সতর্ক করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘কিন্তু কারও গায়ে হাত দেবেন না। প্রথমে এখানে গণঘেরাও কর্মসূচি হবে। তার পর দিল্লি ঘেরাও হবে।’’ পরে অবশ্য ওই মঞ্চেই অভিষেকের কর্মসূচিকে সমর্থন করেও কিছুটা পরিবর্তন করেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কর্মসূচি হবে ব্লক স্তরে। আর ঘেরাও করা হবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে, প্রতীকী ভাবে। যাতে কেউ বলতে না পারেন, বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy