গোরস্থানের পথে: বৃহস্পতিবার বাহালনগরে। নিজস্ব চিত্র
কাশ্মীর থেকে গ্রামে দুঃসংবাদটা এসেছিল মঙ্গলবার রাতেই— জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন বাহালনগরের পাঁচ জন শ্রমিক। তার পর থেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে সাগরদিঘির আটপৌরে ওই গ্রাম। বুধবার রাতে ফের খবর আসে, বৃহস্পতিবার সকালেই গ্রামে পৌঁছবে পাঁচ জন শ্রমিকের দেহ। সেই মতো তাঁদের কবর দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়।
বাহালনগরের এক প্রান্তে রয়েছে গোরস্থান। বৃহস্পতিবার কাকভোরেই সেখানে চলে যান ইবাদত হোসেন, বদরুল শেখ-সহ জনা কুড়ি যুবক। গ্রামের কেউ মারা গেলে মূলত তাঁদের উপরেই কবর খোঁড়ার দায়িত্ব বর্তায়। তবে এ দিন কবর খোঁড়ার সময়ে মাঝেমধ্যেই থমকে গিয়েছেন ওঁরা। চেনা মুখগুলোর কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে উঠেছেন ইবাদতেরা।
ইবাদত বলছেন, ‘‘নইমুদ্দিন চাচা, মোরসালিম চাচাদের হাত ধরেই খেত চিনেছি। ওঁদের সঙ্গেই শিখেছি কী ভাবে কবর খুঁড়তে হয়। আজ সেই লোকগুলোর কবরই আমাদের খুঁড়তে হচ্ছে। এর থেকে বড় কষ্টের আর কিছু নেই। চাচারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ওদের এ ভাবে মেরে কার কী লাভ হল, বলুন তো!’’
বাহালনগর গ্রামে এমনিতে তেমন গন্ডগোল নেই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। গ্রামের চাষআবাদের কাজ ফুরোলেই অনেকেই চলে যান কাশ্মীরে। সেখানে মূলত আপেল খেতেই নানা রকম কাজ করেন তাঁরা। মজুরি সেখানে বেশি বলে এক এক করে অনেকেই পা বাড়িয়েছিলেন ভূস্বর্গে। কিন্তু সেখানে কাজ করতে গিয়ে যে এ ভাবে কফিনবন্দি হয়ে ফিরতে হবে তা ভাবতেই পারেননি কেউ।
এ দিন ওই পাঁচ শ্রমিককে দেখতে গ্রামে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। বাহালনগরেও এ ভাবে একসঙ্গে পাঁচ জনের কবর কবে দেওয়া হয়েছে তা-ও মনে করতে পারছেন না গ্রামের প্রবীণেরা। তাঁদেরই এক জন আরশাদ শেখ বলছেন, ‘‘গ্রামে অভাব আছে। কিন্তু অশান্তি নেই। আমরা সকলেই শান্তিতে বাস করি। এই ঘটনার পরে সব এলোমেলো হয়ে গেল। গ্রাম থেকে হারিয়ে গেল পাঁচ জন জলজ্যান্ত মানুষ। এ শোক সইব কী করে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy