Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB panchayat Election 2023

ভোটের দিন কি বদলাবে? কেন্দ্রীয় বাহিনী, সিভিক কি থাকবে? শুনানি শেষ, হাই কোর্টের রায়দানের অপেক্ষা

সোমবার বিকেলে শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত মামলার শুনানি। কিন্তু সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত শুনানির পরও স্পষ্ট হয়নি পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ। কারণ, এখনও মূল প্রশ্নগুলির জবাব কী হতে চলেছে, তা স্পষ্ট নয়।

The Fate of West Bengal Panchayat election is depending totally on Calcutta High Court’s Order

কলকাতা হাই কোর্টে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে শুনানি চলে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে। তবে শুনানি শেষ হলেও আপাতত রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ১৮:৪৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের দিন কি বদলাবে? কলকাতা হাই কোর্টের নির্বাচনী মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পর সেই জল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। শুনানি শেষে স্থগিত রয়েছে রায়দান। আপাতত হাই কোর্টের পরবর্তী রায় বা নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যের শাসক, বিরোধী সব পক্ষ। এবং তাকিয়ে রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সোমবার রাতের মধ্যে হাই কোর্টের নির্দেশ চলে আসতে পারে। আবার মঙ্গলবারও হয়ে যেতে পারে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়নের জন্য যথেষ্ট সময়সীমা দেয়নি বলে বিরোধীরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন আদালতে। সেই অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে বলে শুনানিতে সহমতও পোষণ করেন প্রধান বিচারপতি। সে ক্ষেত্রে ভোটের দিন ৮ জুলাই থেকে পিছিয়ে ১৪ জুলাইও হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর আর্জি এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের ভোট পরিচালনা বা নিরাপত্তার কাজে বিরত রাখার আর্জিও ছিল বিরোধীদের। তাতেও সমর্থনসূচক কথা শোনা গিয়েছে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে।

সোমবার সকাল ১১টা বেজে ৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে পঞ্চায়েত ভোট মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ তা শেষ হয়। মাঝে ছিল মিনিট ৫০-এর বিরতি। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার শুনানি শেষে বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রায়দান স্থগিত রাখা হল।

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। ওই দিন থেকেই নির্বাচনী বিধি জারি হয়। মনোনয়নের দিন স্থির হয় ৯-১৫ জুন। পরদিনই এই ভোট নিয়ে নানা আপত্তি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আলাদা আলাদা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। এর সঙ্গে পরে যোগ হয় আরও কিছু মামলা। শনিবার ছিল প্রথম শুনানি। সোমবার শুনানির দ্বিতীয় দিন। এ দিন শুনানির প্রথমার্ধে পুরোটাই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। বিরতিতে আদালত ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণে আমি আশাবাদী।’’

তিনটি মূল বিচার্য বিষয়ে (ভোটের দিনক্ষণ, কেন্দ্রীয় বাহিনী, সিভিক ভলান্টিয়ার) শেষ পর্যন্ত আদালত কি কোনও নির্দেশ দেবে? না কি সুপারিশ, প্রস্তাব বা ইচ্ছাপ্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকবে ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, সেটি নিয়েও নানা মতামত, নানা প্রত্যাশা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলিতে।

সোমবারের শুনানিতে তিনটি বিষয়ে কোন পক্ষ কী বললেন, কী বললেন বিচারপতিরা তার সারসংক্ষেপ নীচে দেওয়া হল।

মনোনয়নের সময়সীমা এবং ভোটের দিন

বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ৭৩ হাজার আসনে এত দ্রুত মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন বাদ দিলে এ বার মনোনয়নের জন্য ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রতি দিন ৪ ঘণ্টা করে মনোনয়ন নেওয়া হচ্ছে। ৫ দিনের হিসাব করলে ৭৩ হাজার প্রার্থীর জন্য গড়ে ৪০ সেকেন্ড সময়ও মেলে না।’’ পরে প্রধান বিচারপতিও বলেন, মনোনয়নের জন্য গত বার ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই সময় তো কমেইছে। তা ছাড়া দিনে ৪ ঘণ্টা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ও পর্যাপ্ত নয়। এমনকি, ৯ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত যে সময় মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ছুটির দিনও ছিল। ১১ জুন, রবিবার যে কোনও মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়নি, তা-ও কমিশনকে মনে করিয়ে দেন বিচারপতি। কিন্তু রাজ্য যুক্তি দেয়, মনোনয়ন নিয়ে যে যুক্তি খাড়া করছে বিরোধীরা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই ক’দিনেই শুধু বিজেপির ৪ হাজার মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। একই সঙ্গে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় যে অব্যবস্থার অভিযোগ বিরোধীরা করছে সে প্রসঙ্গেও রাজ্যের যুক্তি, গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে বিডিও অফিসে একটি টেবিলে মনোনয়ন নেওয়া হয় না। অনেক টেবিল রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন একেবারে আলাদা। ওই মনোনয়ন অন্য জায়গায় হয়। কমিশন অবশ্য বলে, আদালত চাইলে তারা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা ১ দিন বৃদ্ধি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৫ জুনের বদলে ১৬ জুন হতে পারে মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, সে ক্ষেত্রে ভোটের দিনও পিছিয়ে ১৪ জুলাই করতে হবে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আপত্তি তুলে কমিশন পাল্টা বলে, তাদের হাত পা বাঁধা। ভোটের দিন এ ভাবে পিছিয়ে দেওয়া যায় না।

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন

বিরোধীরা প্রথম থেকেই বলে আসছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে পঞ্চায়েত ভোট হোক। সোমবার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিও প্রস্তাব দেন পঞ্চায়েত ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানো গেলেই ভাল হয়। বিচারপতি বলেন, ‘‘হনুমান জয়ন্তীর সময় আমরা বলেছিলাম সাধারণ মানুষের মনোবল বাড়াতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে। তারা রাজ্যকে সহযোগিতা করতে এসেছিল। এ ক্ষেত্রেও কমিশন সহযোগিতা চাইতে পারে। কমিশন ৬ থেকে ১০টি জেলাকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা যেতে পারে। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করলেই ভাল হয়।’’ মামলাকারীদের তরফে বিজেপির আইনজীবী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় ৫ বিচারপতির বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়েছিল। সব ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দিকে ইঙ্গিত করছে।’’ পরে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবীও বলেন, ‘‘স্থানীয় স্তরে নির্বাচন পরিচালনা সরকারি কর্মীদের দ্বারাই হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হয়। ইতিমধ্যে এই সংগঠনের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই এঁরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণ করাতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।’’ কংগ্রেসের তরফে আইনজীবী ঋজু ঘোষালও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলেন, এমনকি, কেন্দ্রের ভিতরে বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার পর্যন্ত ভিডিয়োগ্রাফির প্রস্তাবও দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কোর্টে একপ্রস্ত বাদানুবাদ হয় সব পক্ষের মধ্যে। কমিশন বলে, কোর্ট এ ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলতে পারে না। গত বারের পুরভোটের উদাহরণ টেনে তারা জানায়, পুরভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে কমিশনকে স্বাধীনতা দিয়েছিল আদালত। তবে কমিশনের সেই যুক্তি কেটে বিচারপতি বলেন, পুরভোটে অশান্তিও হয়েছিল বলে শুনেছি এবং হাই কোর্ট বলেছিল, অশান্তি হলে তার দায় নেবে নির্বাচন কমিশন।

সিভিক ভলান্টিয়ার

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রাখার কথা বলেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অন্য দিকে, বিরোধীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছিল রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে কি না, তা নিয়ে। তাদের আশঙ্কা ছিল ঘাটতি মেটাতে সিভিক ভলান্টিয়ার, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করতে পারে রাজ্য। এ ব্যাপারে সোমবার আদালতে তৃতীয় জনস্বার্থ মামলাকারী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কী ভাবে ওই কর্মীরা ভোটের কাজে অংশ নিতে পারেন? এটা জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পরিপন্থী। এর আগেও তাঁদের ব্যবহার করা হয়েছে।’’ পরে সিপিএমের আইনজীবীও বলেন, ‘‘ইনস্পেক্টর জেনারেল আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করবে না। কিন্তু গত ২ দিনে দেখা গিয়েছে, রানিনগর এবং ডোমকলে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। সম্ভবত পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী ছিল না। ভোট করাতে সম্ভবত পর্যাপ্ত পুলিশও নেই রাজ্যের কাছে।’’ এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি কমিশনকে বলেন, সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশ নয়। তাই রাজ্য যে পুলিশবাহিনী দিয়ে ভোট করানোর কথা বলছে, তার মধ্যে যেন সিভিক ভলান্টিয়ার বা তাঁদের মতো চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের না ধরা হয়। বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা চাই কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ার কোনও ভাবেই এই নির্বাচনে যেন অংশ না নেন। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ রাখা হোক। কমিশন এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক।’’ কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারদের পক্ষে সওয়াল করে খোদ কমিশন। তাদের যুক্তি, ভোটকর্মীর অভাব হলে ঘাটতি মেটাতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী, এনসিসি-র সদস্য, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করতে পারে কমিশন। তবে আদালতের নির্দেশ মেনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করা হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

WB panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy