ললিত ঝা। —ফাইল চিত্র।
লকডাউনে যুবকটিকে অসহায় ভাবে রাস্তায় মাছ-আনাজ বিক্রি করতে দেখেছিলেন। সংসদের ভিতরে বুধবার গ্যাস ক্যানিস্টার খুলে হলুদ ধোঁয়া ছড়ানো ও বাইরে বিক্ষোভ সংগঠিত করার পিছনে সেই যুবকেরই ষড়যন্ত্রের কথা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না বাগুইআটির প্রতিবেশীদের। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির বাইরে পুলিশ দেখে তাঁরা জানতে পারেন, সংসদ কাণ্ডের আসল মাথা তাঁদের পাড়ার সেই যুবক ললিত ঝা।
বাগুইআটির হেলা বটতলা এলাকার জোকার মাঠে একটি তেতলা বাড়ির দোতলায় বছর তিনেক আগে ভাড়ায় আসেন ললিতেরা। বাড়ির মালকিন শেফালি সর্দার বলেন, ‘‘ললিত প্রথমে বলেছিল ওর দাদা আর বাবা থাকবে। আমি ভাড়া দিতে চাইনি। তখন বিহার থেকে মাকে নিয়ে আসে।’’ বাড়ির মালকিন, অন্য ভাড়াটেরা জানতেন, ললিত পেশায় শিক্ষক। চাকরি না পেয়ে ছাত্র পড়িয়ে তাঁর দিন চলে। পাড়ায় লক্ষ্মী-সরস্বতী পুজো করতেও ডাক পড়ত ললিতের।
প্রতিবেশীরা জানান, গত ১০ তারিখে ঘরে তালা দিয়ে ললিতদের পরিবারের সবাই চলে গিয়েছেন। সকালে ললিতের মা-বাবা ও ভাই বিহার চলে যান। বিকেলের পরে ঘরে তালা দিয়ে চলে যান ললিতও। বাড়ির অন্য এক ভাড়াটেকে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন বলেই জানিয়েছিলেন।
এ দিন গলি, তস্য গলির ভিতরে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় জটলা।
প্রতিবেশীরা জানান, চাকরি না পেয়ে ললিতকে খুব হতাশ মনে হত। শেফালি বলেন, ‘‘ওরা বড়বাজারে কোথাও থাকত। আমাকে বলেছিল ওই জায়গায় বাড়ি ভাঙা পড়ছে। তাই ওরা বাড়ি খুঁজছে। ললিত বলেছিল, ঝিলবাগান এলাকায় একটি স্কুলে চাকরি করত। কিন্তু বেতন কম বলে চাকরি ছেড়ে দেয়।’’ এ দিন ওই স্কুলে গিয়ে ললিতের খোঁজ করলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে চেনেন না বলেই দাবি করেছেন।
হেলা বটতলা এলাকার ওই ঝিলবাগানেই বাড়ি ললিতের দাদা শম্ভু ঝায়ের। শুক্রবার তাঁর দাবি, কেন, কার পাল্লায় পড়ে, কার পরমার্শে ললিত সংসদে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা পরিবারের কেউ জানেন না। শম্ভুর দাবি, এর পিছনে অন্য কেউ থাকতে পারে।
ললিতের গ্রেফতারের খবর এসেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে এখন দিল্লি গিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনা, মামলা লড়ার সামর্থ নেই বলেও জানিয়েছেন শম্ভু। তাঁর দাবি, ললিত স্নাতক হয়েও চাকরি পাচ্ছিলেন না। স্থানীয় একটি স্কুলে শিশুদের পড়াতেন। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। সেই রাগ থেকেই ললিত এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না, তা অবশ্য তাঁর জানা নেই।
বিহারের দারভাঙা জেলায় আদি বাড়ি হলেও কলকাতাতেই থাকতেন ললিতেরা। সূত্রের খবর, প্রথম দিকে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে ললিত ছোট ভাই সোনু ও বাবা-মায়ের সঙ্গে বাগুইআটিতে থাকছিলেন। ললিতের পড়াশোনাও কলকাতাতেই। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি স্কুলে পড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হন। ভগৎ সিংহ, সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত ললিতকে কখনও রাজনীতি করতে তিনি দেখেননি বলে দাবি শম্ভুর।
সোনু বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানে কাজ করতেন। পেশায় পুরোহিত ছিলেন ললিতের বাবাও। গত রবিবার সোনু বাবা-মাকে নিয়ে দেশে যান। শিয়ালদহ স্টেশনে তাঁদের ছাড়তে যান ললিত। ওই দিন রাতেই তাঁর সঙ্গে ললিতের শেষ কথা হয় বলে দাবি শম্ভুর।শুক্রবার সোনুও বিহার থেকে ফোনে জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর রাতে ললিত দিল্লি ঘুরতে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, চার-পাঁচ জন সঙ্গে থাকবে। পুলিশ জানতে পেরেছে, কলকাতা থেকে ১০ ডিসেম্বর রাতের ট্রেনে দিল্লি রওনা দেন ললিত। পরের দিন দিল্লি পৌঁছে সংসদ কাণ্ডের বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ললিতের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। ওই রাতেই বাগুইআটি গিয়ে শম্ভুর সঙ্গে কথা বলেন গোয়েন্দারা। ললিতের পরিচিত, হালিশহরের বাসিন্দা নীলাক্ষ আইচকেও বৃহস্পতিবার রাতে এসটিএফ জিজ্ঞাসাবাদ করে। নীলাক্ষর মোবাইলের স্ক্রিনশট সংগ্রহ করা হয়। ঘটনার পরেই নীলাক্ষকে মোবাইলে সংসদের বাইরের ভিডিয়ো পাঠিয়েছিলেন ললিত। ওই সূত্রেই নীলাক্ষর নাম উঠে আসে। বিধাননগর কলেজের এই ছাত্রের বাবা নিলয় জানিয়েছেন, পুলিশকে তাঁরা সব রকম সহযোগিতা করেছেন।
ললিতের সঙ্গে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম জড়িয়ে গিয়েছে। লালবাজারের সূত্রের দাবি, ওই এনজিওগুলি কী কাজ করে, তাদের পিছনে কারা রয়েছে, খোঁজ করা হচ্ছে। সংগঠনগুলির বিভিন্ন সদস্যকে ডাকা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, দিল্লি পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। সংসদের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। শুক্রবার কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘বিধানসভার নিরাপত্তা অটুট রাখতে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy