রাফিকুল শেখের পরিবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
মাটির বাড়ি, আড়াআড়ি আলকাতরা লেপা। সেই অস্পষ্ট কালো অন্ধকার যেন ছেয়ে আছে বাড়ির কানাচকানাচে। বাড়ির এক মাত্র রোজগেরে মানুষটা চলে য়াওয়ায় সেই অন্ধকার যেন দিনের বেলাতেও ঘোর বাস্তব হয়ে নেমে এসেছে রাফিকুল শেখের বাড়িতে।
স্ত্রী, বছর চব্বিশের মাবিয়া বিবি আর দুটি নাবালক ছেলে-মেয়ে, মাবিয়া বলছেন— ‘সংনরটা টানব কি কইরা, ভাবতেসি কিন্তু কুল পাইতেসি না গো!’’ ছোট্ট দুই ঘরের টিনের বাড়িতে তিনটি পরিবার। তারই একটি ঘরে কোনওরকমে থাকা। গ্রামে এক সময় ভ্যান রিকশা চালাতেন রাফিকুল। বছর দুয়েক ধরে রুজির টানে তাঁর কাশ্মীর যাত্রা। স্ত্রী মাবিয়াকে বলে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে নিজেই একটি ভাল ভ্যান কিনে চালাবেন, আর ভিন রাজ্যে যাবেন না। স্বামীর ইচ্ছেতে বাদ সাধেননি মাবিয়া। কিন্তু এখন কি হবে?
ছোট ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ে মাঝে মধ্যেই। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছে। তার পিছনে খরচের বহর কম নয়। সরকারি সাহায্য কিছু জুটেছে বটে, মাবিয়া বলছেন, “তাতে আর ক’দিন টানব! ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি। বিড়িও বাঁধতে পারি না। আইসিডিএস বা পঞ্চায়েতে পিওনের একটা চাকরিটা পেলেও ছেলে-মেয়ে দু’টো বর্তে যেত!’’ শোকের মধ্যেও বাস্তব ছুঁয়ে য়াচ্ছে তাঁর গলায়।
মুরসালিমের মৃত্যু আরও কঠিন সঙ্কটে ফেলেছে স্ত্রী সায়েরা বিবিকে। বাড়িতে দুই নাবালক ছেলে-মেয়ে ছাড়াও ৭৫ বছরের বৃদ্ধ শ্বশুর ও শাশুড়ি। রোজগেরে বলতে ছিল এক মাত্র ছেলে মুরসালিম। স্ত্রী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন স্কুলে। বাড়িটা করেছিলেন ইন্দিরা আবাস যোজনার সাহায্য পেয়ে। সঙ্গে কিছু টাকা ধারও নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে। ঋণ মিটবে কি করে তাও ভাঁজ ফেলেছে সায়েরার কপালে। বলছেন, “সরকারি অর্থ সাহায্য পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু তাতে আর কত দিন চলবে? তাই একটা কাজের জন্য বলেছি মন্ত্রীকে। যদি হয় তা হলে অন্তত ডাল ভাতটা জুটবে।’’
শনিবার, মৃত ৫ শ্রমিকের বাড়িতেই ছিল পারলৌকিক ক্রিয়ার অনুষ্ঠান, চাহারুন। তারই আয়োজনে প্রতিবেশিরা সামিল হয়েছিলেন বাড়িতে। তারাই সামলাচ্ছিলেন রান্নাবান্না-সহ যাবতীয় আয়োজন। গ্রামের রাস্তাঘাট একেবারে সুনসান। গ্রামে ঢুকতেই চায়ের দোকানের আড্ডাতেও দেখা যায়নি কাউকে। গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের কথায়, “এত বড় একটা ঝড় গেল গ্রামের উপর দিয়ে, ধাতস্ত হতে সময় তো লাগবেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy