Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Jitendra Tiwari

চারটি ব্যর্থ ফোন এবং জিতেন্দ্রর ক্ষমাসুন্দর ‘ঘর ওয়াপসি’

শুক্রবার ওই চারটি ব্যর্থ ফোনকলেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল জিতেন্দ্র তিওয়ারির রাজনৈতিক ভাগ্য। যার শেষ হল গভীর রাতে ‘ভুল’ স্বীকার করে।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ফাইল চিত্র।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৫৮
Share: Save:

দু‌’টি ফোনকল প্রাপক ধরেননি। বাকি দু’টি ধরেছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। শুক্রবার ওই চারটি ব্যর্থ ফোনকলেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল জিতেন্দ্র তিওয়ারির রাজনৈতিক ভাগ্য। যার শেষ হল গভীর রাতে ‘ভুল’ স্বীকার করে তৃণমূলেই থাকা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার ঘোষণায়। যাঁর ‘হাতযশে’ জিতেন্দ্রর ‘ঘর ওয়াপসি’ হল, তিনি আপাতত হরিদ্বারে। সোমবার দিল্লিতে ফেরার কথা। শুক্রবার বেশি রাতে যখন নিউ আলিপুরের একটি ক্লাবের সামনে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পাশে দাঁড়িয়ে জিতেন্দ্র ডানহাতের দু-আঙুল তুলে ‘ভি’ দেখাচ্ছেন, তখন বাবুল সুপ্রিয়র ফোন বেজে গেল। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর বৃস্পতিবারের জিতেন্দ্র-বিরোধী ফেসবুক পোস্টের নীচে এমন কমেন্ট জড়ো হতে শুরু করেছে যে, ‘আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়ই শেষ কথা’।

বৃহস্পতিবার জিতেন্দ্র আসানসোলের পুর-প্রশাসক পদ এবং তৃণমূল ছাড়তেই তাঁর বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনা জোরাল হতে শুরু করে। তার পরেই বাবুলের ফেসবুক-তোপ। যেখানে তিনি স্পষ্টই বলেন, জিতেন্দ্রকে বিজেপি-তে নেওয়ার বিষয়টিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে তিনি বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। বাবুল এমনও জানান, প্রয়োজনে তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন। শুক্রবার সকালে বাবুলের যুক্তি ‘সঙ্গত’ বলে প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অন্য বিভিন্ন এলাকাতেও বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা ওই বিষয়ে সরব হতে শুরু করেন। তার পরেই নড়েচড়ে বসেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বাবুলকে ফোন করে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়। বলা হয়, তিনি যেন তাঁর অভিমত স্পষ্ট করে বলেন। তাঁর মতামত অমিত শাহকে জানানো হবে।

বাবুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি জানিয়ে দেন, জিতেন্দ্রকে দলে নিলে আসানসোলের বিজেপি কর্মীরা তো বটেই, এলাকার মানুষও ক্ষুব্ধ হবেন। কারণ, গোটা আসানসোল এবং সংলগ্ন এলাকা জিতেন্দ্র ‘কার্যকলাপ’ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই অবহিত। বাবুলের এক হিতৈষী বলেন, ‘‘বাবুল সরাসরিই বলে, আমাদের তরফে এই বার্তা যেন না-দেওয়া হয় যে, যারাই তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে ঝাঁপ দিতে চাইছে, তাদেরই আমরা বাছবিচার না করে দলে নিয়ে নিচ্ছি। রাজ্য থেকে যদি অন্তত এমন চারজনকে প্রত্যাখ্যান করা হয়, তা হলে তাঁদের মধ্যে একজনের নাম অবশ্যই জিতেন্দ্র তিওয়ারি হওয়া উচিত! তাতে জনমানসে ভাল বার্তা যাবে। এটাও বোঝানো যাবে যে, বিজেপি একটি অনুশাসিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। যাদের তারা দলে নেয়, তাদের দেখেশুনেই নেয়।’’

বিজেপি সূত্রের খবর, তার পর জিতেন্দ্রর জন্য খোলা দরজায় তালা পড়ে যায়। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে আর যোগাযোগ করা হয়নি।

কিন্তু জিতেন্দ্রও ততক্ষণ নীরবে বসেছিলেন না। তিনি মরিয়া হয়ে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। পর পর দু’বার তিনি বাবুলকে ফোন করেন। কিন্তু বাবুল ফোন ধরেননি। তার পর বাবুলকে ফোন করেন স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারী। দু’বার ফোনে তাঁদের দু’জনের কথা হয় বলে বিজেপি সূত্রের খবর। শুভেন্দু-শিবিরের খবর, তিনি বাবুলকে অনুরোধ করেন সৌজন্যবশত জিতেন্দ্রর ফোনটা একবার ধরতে। পক্ষান্তরে, বাবুল-শিবিরের দাবি, শুভেন্দুকে তিনি বলেন, জিতেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর যে স্তরের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে, তাতে তাঁর পক্ষে ‘সাধারণ সৌজন্য’ও দেখানো সম্ভবপর হচ্ছে না। বাবুলের এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘এমনিতেই জিতেন্দ্রর বিজেপি-তে যোগদানের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর থেকে আসানসোলের একাংশে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এর পিছনে বাবুলের হাত রয়েছে। ওঁর সঙ্গে জিতেন্দ্রর গোপন বোঝাপড়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় বাবুল জিতেন্দ্রর সঙ্গে ফোনে কথা বললে তারও ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে। শুভেন্দুকেও বাবুল তা জানিয়ে দেন। শুভেন্দুকে বাবুল জানিয়েছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা করতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু জিতেন্দ্রের বিষয়ে তিনি একটি প্রকাশ্য নীতিগত অবস্থান নিয়েছেন। সেটা ভাঙা তাঁর পক্ষে ঠিক হবে না।’’ এর পর শুভেন্দুও আর বাবুলকে জোরাজুরি করেননি বলেই বিজেপি সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন: অমিত সভায় বক্তৃতা করবেন মুকুল, দিলীপ এবং ‘শ্রী…’

যদিও শনিবার জিতেন্দ্রর ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন, তিনি আদৌ বাবুলকে ফোন করেননি। পুরোটাই বিজেপি আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছে। তাঁর এক অনুগামীর কথায়, ‘‘জিতেনদা কখনওই বলেননি, তিনি বিজেপি-তে যাবেন। বরং তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করার পর প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কোনও দল করবেন না। আদালতে আইন প্র্যাকটিস করবেন। এসব এখন বিজেপি-র শিবির থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রটানো হচ্ছে। যাতে আসানসোলে বাবুলের ভাবমূর্তি আরও উঁচুতে তুলে ধরা যায়।’’ বাবুল নিজে ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁকে বহুবার ফোন করা হলেও তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, বাবুল আপাতত হরিদ্বারে রয়েছেন। সোমবার তাঁর দিল্লি ফেরার কথা। তার পর তাঁর কলকাতায় আসারও সূচি রয়েছে।

আরও পড়ুন: রাত বাড়তেই ভোলবদল জিতেন্দ্রর, শাহের মঞ্চে আজ শুভেন্দু-সঙ্গী কারা

অন্য বিষয়গুলি:

Jitendra Tiwari Babul Supriyo TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy