ক্যাব বাইক সংস্থাগুলিকে শোকজের ভাবনায় পরিবহণ দফতর। — ফাইল চিত্র।
অ্যাপ বাইক সংস্থাগুলিকে শো-কজ় করতে পারে পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি পরিবহণ দফতরের সচিব সৌমিত্র মোহনের নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানেই পরিবহণ ব্যবস্থার সংস্কারে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই বৈঠকেই অ্যাপ বাইক সংস্থাগুলির জন্য নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে র্যাপিডো, ওলা-সহ যে সমস্ত অ্যাপ বাইক সংস্থাগুলি পরিবহণ দফতরের নিয়ম কানুন মেনে কাজ করছে না, তাঁদের শো-কজ় করার সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, যাত্রীদের পরিষেবা দিতে গিয়ে সংস্থাগুলি এমন ধরনের বাইক চালাচ্ছে, যেগুলি পরিবহণ দফতরের খাতায় কলমে এখনও বাণিজ্যিক গাড়ি হিসাবে নথিভুক্ত নয়। পরিবহণ দফতর সুযোগ করে দেওয়া সত্বেও, ওই বাইকগুলিকে বাণিজ্যিক গাড়ি পরিবর্তন করা হয়নি। এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে বলে জানাচ্ছে পরিবহন দফতরের একটি সূত্র। বিষয়টি পরিবহণ সচিবের বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়েছিল। তার পরেই অ্যাপ বাইক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় একমত হয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
পরিবহণ দফতরের তথ্য বলছে, রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার বাইক এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। যার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকদের গাড়ির নম্বর প্লেট বাণিজ্যিক নয়। তাই গত জুলাই মাসে পরিবহণ দফতরে নতুন নিয়ম আনা হয়। তাতে বলা হয়, নম্বর বদল না করেই প্লেটের রং বদল করা যাবে অ্যাপ বাইকের। সিদ্ধান্ত হয়েছিল শহর কলকাতা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করা অ্যাপ বাইকগুলিতে হলুদ প্লেট লাগানো বাধ্যতামূলক করা হবে। কারণ এমন বহু অ্যাপ বাইক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যেগুলিতে বাণিজ্যিক গাড়ির মতো হলুদ নম্বর প্লেট লাগানো হয়নি। ফলে রাস্তায় চলাচল করা অ্যাপ বাইকগুলিকে চিহ্নিত করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এমন অভিজ্ঞতা থেকেই পরিবহণ দফতরের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মাত্র এক হাজার টাকা ব্যয় করে সাদা প্লেটের বদলে হলুদ নম্বর প্লেট লাগানো যাবে। ফলে বাইকটি সহজেই ব্যক্তিগত থেকে বাণিজ্যিক রূপ পেয়ে যাবে আইনি ভাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অ্যাপ বাইকগুলিকে পরিবহণ দফতরের এই শর্তপূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা দেয় বিপত্তি। নম্বর প্লেট বদল প্রক্রিয়ায় গিয়ে বাইকগুলিকে নম্বর বদলাতে হচ্ছিল। কিন্তু এই কাজ আটকে যাচ্ছিল একটি নির্দিষ্ট নিয়মে। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বাইকগুলি বেশিরভাগই কোনও না কোনও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। তাই ঋণদানকারী সংস্থার ছাড়পত্র ছাড়া গাড়ির নম্বর বদল করা যাচ্ছিল না। তাই বহু বাইক নম্বর প্লেটের রং বদলাতে এসেও, বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছিল। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বৈঠকে বসেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। সিদ্ধান্ত হয় এই প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র গাড়ির প্লেটের রং বদল হবে, কোনও ভাবেই গাড়ির নম্বর বদল করা হবে না।
কিন্তু নতুন নিয়ম চালুর করার পরেও অ্যাপ বাইক চালকদের মধ্যে এই সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা আসেনি বলেই অভিযোগ। তাই তারা যেমন সাদা নম্বর প্লেট দিয়েই অ্যাপ বাইক চালাচ্ছেন, তেমনই র্যাপিডো এবং ওলার মত সংস্থাগুলি সেই সব বাইক চালকদের নিজেদের অধীনে পরিষেবা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। তাই অ্যাপ বাইক চালক কিংবা সংস্থাগুলির এই ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ মানতে নারাজ পরিবহণ দফতর। কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই আপাতত সংস্থাগুলিকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শো-কজ়ের চিঠি পাওয়ার পরেও কাজ না হলে, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠিন পদক্ষেপের কথা মাথায় রাখছে পরিবহণ দফতরের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy