Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জবার আকাশছোঁয়া দামে মাথায় হাত উদ্যোক্তাদের

প্রতি হাজার জবাফুলের পাইকারি দর তিনশো থেকে চারশো টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। ব্যবসায়ী এবং চাষিদের মতে, কালীপুজোর দিন হাজারটি জবাফুলের দাম ন্যূনতম এক হাজার টাকা হবে। অর্থাৎ ফুল প্রতি দাম হবে এক টাকা।

চড়া দামে বিকোচ্ছে জবার মালা। নিজস্ব চিত্র

চড়া দামে বিকোচ্ছে জবার মালা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৭
Share: Save:

মাত্র তিন দিন বাকি কালীপুজোর। এখনই ফুলের বাজারে জবার দাম স্বাভাবিকের তুলনায় ছ’গুণ বেড়ে গিয়েছে। তাতেই মাথায় হাত পড়ছে পুজো-উদ্যোক্তাদের। তাঁদের প্রশ্ন, এখনই যদি এত দাম হয়, তবে কালীপুজোর দিন কী হবে?

যদিও এ নিয়ে চিন্তিত নন ফুল ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ইতিমধ্যেই পদ্মের জায়গা পুরোদস্তুর দখল করে ফেলেছে পঞ্চজবা, লালজবা আর রাশি রাশি জবার কুঁড়ি। এ দিন প্রতি হাজার জবাফুলের পাইকারি দর তিনশো থেকে চারশো টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। ব্যবসায়ী এবং চাষিদের মতে, কালীপুজোর দিন হাজারটি জবাফুলের দাম ন্যূনতম এক হাজার টাকা হবে। অর্থাৎ ফুল প্রতি দাম হবে এক টাকা। খুচরো বাজারে সেই দাম আরও চড়বে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি, কালীপুজোয় অপরিহার্য ১০৮টি জবার মালা ওই দিন কম করে ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এক ফুলচাষি এবং ব্যবসায়ী মুকুন্দ নায়েক বলেন, ‘‘পুজো-পার্বণেই তো আয়ের আশা থাকে আমাদের। না হলে তো সারা বছর মন্দা যায়। দামের তুলনা করলেই সেটা বোঝা যাবে। স্বাভাবিক সময়ে হাজার জবার দাম হয় পঞ্চাশ টাকা।’’

উদ্যোক্তাদের মতে, গত বছর কালীপুজোয় বাজারে জবা-সহ অন্য ফুলের দর হাতে ছেঁকা লাগার মতোই চড়া হয়েছিল। যুক্তি ছিল, দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর আগে নিম্নচাপের ফলে অকালবৃষ্টিতে দোপাটি, গাঁদা, অপরাজিতার মতো ফুলগাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে যায়। তাতেই বহু গাছ নষ্ট হয়ে চাষের ক্ষতি হয়েছিল। পাশাপাশি কালীপুজোয় ব্যবহৃত অন্যতম ফুল জবার কুঁড়ি পচে এবং অকালে ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জোগান। চাহিদা অনুযায়ী জোগান কমের কারণে দাম আকাশ ছুঁয়েছিল।

এ বছর গত বারের মতো জোগানে তেমন ঘাটতি নেই বলেই জানাচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক নিয়মেই জবার দামের পারদ তাই ঊর্ধ্বমুখী— বলছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক এবং মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির সদস্য নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর পরপরই নিম্নচাপের কারণে কয়েক দিন একটানা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির জল জবার কুঁড়িতে পড়ায় স্বাভাবিক পরিপূর্ণতার আগেই তা ফুটে যাচ্ছে। ফলে পুজোর দিনকয়েক আগে থেকেই ফুলের উৎপাদন কমে যাবে। কারণ নতুন করে কুঁড়ি আসার আর সময় নেই। জবাফুল একটানা পনেরো দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সেই হিসেবে প্রস্ফুটিত ওই ফুল উল্টোডাঙা, ধূলাগড়, পাশকুঁড়া এবং নদিয়ার ধানতলার মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যাতে নির্দিষ্ট দিনে প্রয়োজন মতো জোগান দেওয়া যায়।’’

হিমঘরে সংরক্ষণের সেই খরচও যুক্ত হচ্ছে ফুলের দামে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিরাকোল, নদিয়ার ধানতলা, হাওড়ার বাগনানের বিভিন্ন এলাকা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রচুর জবার চাষ হওয়া সত্ত্বেও জবাফুলের দাম এক ধাক্কায় বাড়ার আরও একটা যুক্তি, পুজোর সংখ্যা। ফুলচাষিরা বলছেন, দুর্গাপুজোর থেকে কালীপুজো অনেক বেশি হয়। সেই জোগানের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রতি বছরই হিমশিম খেতে হয় ব্যবসায়ীদের। তার সঙ্গে যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যুক্ত হয়, তা হলে দাম স্বভাবতই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja Flower Flower Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE