কেন্দ্রের নির্দেশ থাকলেও, এতদিন মান্যতা পাচ্ছিল না চায়ের নিলাম। প্রতিরোধ আসছিল একাধিক দিক থেকে। তা নিয়ে জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগও বাড়ছিল সমান্তরালে। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যজনিত কারণে গুঁড়ো চায়ের একশো শতাংশ নিলাম বাধ্যতামূলকই করল কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে এই প্রক্রিয়া ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। যা নিয়ে গেজ়েট বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিল মন্ত্রক। কিন্তু তা কার্যকর না হওয়াকে কেন্দ্র করে বেশ জলঘোলা হয়। শেষে পদ্ধতিটির মেয়াদবৃদ্ধি হওয়া জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
প্রশাসনিক নথি জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে মোট পরিমাণের মাত্র ১৪.৫১% চা নিলামে অংশ নিত। অসমের ক্ষেত্রে সেই হার ছিল ৮৩.৭১%। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র একশো শতাংশ নিলামের মেয়াদ বাড়ানোয় বাকিদেরও এ বার সেই পদ্ধতি মানতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এতে নিলামে পাঠানো চায়ের নমুনা বাধ্যতামূলক ভাবে খাদ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (এফএসএসএআই) দিয়ে যাচাই করাতে হবে। তাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকলে সেই চা বাজারে পৌঁছবে না বলে দাবি চা-বিশেষজ্ঞদের একাংশের। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, চা-চাষে ‘মনোক্রটোফস’ বা ‘ডিডিটি’-র মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যা থেকে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। কারণ, গুঁড়ো চা খেয়ে থাকেন বেশির ভাগ মানুষ। ফলে গুঁড়ো চায়ের গুণমান যাচাই হলে বাকি গোত্রের সব চায়ের যাচাইও হয়ে যাবে সমান্তরালে।
প্রসঙ্গত, খুব সম্প্রতি টি-বোর্ড শিলিগুড়িতে একাধিক কারখানায় হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে। অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন জায়গা থেকে নিম্নমানের চা-পাতা এনে রং-রাসায়নিক মিশিয়ে তা ডুয়ার্স-দার্জিলিং চা বলে বিক্রি করা হতো বাজারে। রাজ্যের দাবি ছিল, সঠিক নীতির অভাবে অন্যান্য রাজ্য থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকা চা রাজ্যের বাজারে ঢুকছে। তাতে রাজ্যের চায়ের গুণমান নিয়ে অকারণ প্রশ্ন উঠছে। তবে নিলাম পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি এমন অভিযান হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা, বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকে।
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিলামের মাধ্যমে যেতে হলে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানাচ্ছিলেন চা-সংগঠনগুলির একাংশ। গত ১০ জুলাই নবান্নও লিখিত ভাবে দাবি করেছিল, নিলাম বাধ্যতামূলক করার নীতি অনেক আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ভাল-মন্দ বিচার করে ছোট চা-উৎপাদক ও শ্রমিকদের সম্ভাব্য ক্ষতি আটকাতে কেন্দ্র-রাজ্যের আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু মন্ত্রক সূত্রের দাবি, আগের তুলনায় দর অনেকটা বেড়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। মন্ত্রকের তথ্য, এ রাজ্যের ‘এস্টেট’-কারখানাগুলিতে ২০২৩ সালের গড় দাম ছিল প্রায় ২০০ টাকা। সেটা এ বছর বেড়ে হয়েছে ২২৮.৭৭ টাকা। ‘বট-লিফ’ কারখানাগুলিতে গত বছর এবং এ বছরের দর যথাক্রমে ১২১.৪৬ এবং ১৩২.৪১ টাকা।
সূত্র জানাচ্ছে, নিলামের জন্য অসমের থেকে সব চেয়ে বেশি প্রতিরোধ আসছিল বলে সে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সবিস্তার তথ্য পাঠিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলে চা-পর্ষদ। তার পরে কেন্দ্রের কাছে নিলাম বাধ্যতামূলক এবং তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মেয়াদ আরও দু’মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করে টি-বোর্ড। সেই প্রস্তাবেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy