অর্থের বিনিময়ে চাকরি ‘বিক্রি’র অভিযোগও উঠেছে অয়নের বিরুদ্ধে। টলিউডে টাকা বিনিয়োগেরও প্রমাণ মিলেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বছর দু’য়েক আগেও নির্বিঘ্নে সিনেমা প্রযোজনায় নেমেছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অয়ন শীল। টলিউডের বড় বড় তারকা এবং পরিচালককে নিয়ে শুরু করেছিলেন একটি সিনেমার শুটিং। সেই সিনেমায় অভিনয় করার কথা ছিল এক মডেল শ্বেতা চক্রবর্তীরও। ঘটনাচক্রে ওই একই নামে কিছু সম্পত্তি এবং গাড়ির নথি অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, অয়নের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে ওই সিনেমা সংক্রান্ত বহু নথিই পাওয়া গিয়েছে। ওই নথি থেকেই জানা গিয়েছে, সিনেমার পাশাপাশি বাংলা সিরিয়াল তৈরি করার বিষয়ে কথা চলছিল অয়নের। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্রও হাতে এসেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে সিনেমা, সিরিয়াল প্রযোজনার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থ অয়নের কাছে কোথা থেকে এল কিংবা নিয়োগ দুর্নীতিতে হাতে আসা কালো টাকাকে বৈধ করতেই অয়ন সিনেমার ব্যবসায় নেমেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হুগলির তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অয়নকে সোমবারই ১২ দিনের হেফাজতে নিয়েছে ইডি। তার আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে শান্তনু জানিয়েছিলেন, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুন্তল ঘোষের মতো এজেন্ট মারফত যোগাযোগ রাখতেন অয়ন। একই সঙ্গে ইডিও অয়নের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ঘেঁটে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে বলে ইডির একটি সূত্রে খবর। ওই সূত্রেই জানা গিয়েছে, অয়নের বাড়ি থেকে যে সমস্ত নথি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি, তাতে দেখা যাচ্ছে টলিউডের একটি সিনেমার শুটিং, অভিনেতা-কলাকুশলীদের সাম্মানিক বাবদ খরচের হিসাব রয়েছে। আছে একটি টিভি সিরিয়াল সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তিপত্রও। সিরিয়ালের নাম জানা যায়নি। তবে সিনেমার নাম প্রকাশ্যে এসেছে ইতিমধ্যেই।
২০২০ সালে ওই সিনেমার প্রযোজনা শুরু করেছিলেন অয়ন। নাম— ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পরিচালনায়। অভিনয় করার কথা ছিল ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, অর্জুন চক্রবর্তীর। ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল শ্বেতারও। ঘটনাচক্রে ওই একই নামে বেশ কিছু সম্পত্তি এবং গাড়ির নথি অয়নের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। যদিও ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ সিনেমার অভিনেত্রী শ্বেতা এবং অয়নের বাড়িতে উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির নথিতে নাম থাকা শ্বেতা একই ব্যক্তি কি না তা এখনও প্রমাণ হয়নি। ঠিক যেমন জানা যায়নি ওই সিনেমায় বিনিয়োগ করা অয়নের অর্থের সূত্র কী?
অয়নের বিরুদ্ধে ৬০টি পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। অর্থের বিনিময়ে চাকরি ‘বিক্রি’র অভিযোগও উঠেছে অয়নের বিরুদ্ধে। যদিও সেই অর্থ তিনি কোথায় পাঠাতেন, তা জানতে এখনও তদন্ত চলছে। এর মধ্যেই অয়নের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত নথি থেকে তাঁর টলি যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। তার মধ্যে অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে শো স্টপার নামে একটি সংস্থার টিভি ধারবাহিক সংক্রান্ত প্রযোজনার একটি মউ যেমন রয়েছে, তেমনই ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’র আউটডোর শুটিংয়ের অনুমতি চেয়ে সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতিকে লেখা চিঠিও রয়েছে। আছে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের খরচের হিসাব। ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ সিনেমার খরচ এবং যাবতীয় কাজের হিসাব। ওই সিনেমার কলাকুশলীদের দেওয়া সাম্মানিকের হিসাবের নথিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy