আদালতের-পথে: তানিয়া পরভিন। নিজস্ব চিত্র
ক’দিন ধরে জনা তিনেক মহিলা-পুরুষকে গ্রামের একটি দোকানে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। টুকটাক ছবিও তুলছিলেন তাঁরা। শহরের কর্তারা বুঝি করোনাভাইরাস নিয়ে কোনও কাজ করতে এসেছেন বলে ধরে নেন গ্রামবাসীরা। বুধবার সন্ধ্যায় অবশ্য সে ভুল ভেঙেছে তাঁদের। জানা গিয়েছে, সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা নজর রাখছিলেন গ্রামের মেয়ে তানিয়া পরভিনের উপরে। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগে যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
খবর শুনে চোখ কপালে পাড়া-পড়শির। এই নাকি সারা দিন বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকে, গলা তুলে কথা পর্যন্ত বলে না। কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদের রেকর্ড বিশেষ নেই! ছাপোষা ঘরের শিক্ষিত মেধাবী মেয়ের সম্পর্কে গোয়েন্দারা যা জানাচ্ছেন, তার সঙ্গে তানিয়াকে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না গ্রামের মানুষ।
মলয়াপুর গ্রামে বাড়ি
বছর একুশের তানিয়ার।
একতলা ইটের গাঁথনি। বাবা আলামিন মণ্ডল, মা মেহের বিবি। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন আলামিন। মেহের গ্রামের আশাকর্মী। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার। পড়াশোনায় ভাল বলে তাদের নামডাক আছে গ্রামে। ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ান তানিয়া। সামান্য কিছু রোজগারও হয়। ২০০০ সালে বন্যার সময়ে বনগাঁর গ্রাম থেকে বাদুড়িয়ায় চলে আসে পরিবারটি।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সেই বাড়ির সামনেই হঠাৎ হাজির কয়েকটা গাড়ি। শব্দ শুনে দু'চারখানা মুখ উঁকিঝুঁকি মারে আশেপাশের জানলা দরজা থেকে। পড়শিরা দেখেন, চোখের পলক ফেলার আগে ঘিরে ফেলা হয় আলামিনের বাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে কাপড়ে মুখ ঢেকে বাড়ির মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে যান আগন্তুকেরা। জানা যায়, পুলিশ এসেছিল।
আলামিন বলেন, ‘‘পুলিশের লোকেরা এসে মেয়ের ঘর তছনছ করে কয়েকটা মোবাইল, ডায়েরি তুলে নিল। মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাদুড়িয়া থানায় যোগাযোগ করার কথা বলে বেরিয়ে গেল। থানায় গেলে পুলিশ জানাল, মেয়ের নাকি বিদেশে কী সব যোগাযোগ আছে। তাই জেরা করা হবে।’’
এলাকায় নিরীহ মানুষ বলেই পরিচিত আলামিন। নিজের মেয়েকেও যেন এখন আর চিনতে পারছেন না।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, দু’চার দিনের পরিকল্পনা নয়, কয়েক বছর ধরে তানিয়ার উপরে নজর রাখছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, মোবাইলে সিরিয়া, পাকিস্তান, কাশ্মীরে ঘন ঘন ফোন করতেন তানিয়া। বাচ্চাদের পড়িয়ে যে ক'টা টাকা রোজগার ছিল, তাতে মোবাইলের পিছনে ওই খরচই সম্ভব নয়!
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তানিয়ার সঙ্গে একজনের প্রেমের সম্পর্ক আছে। ওই যুবকই তাঁকে ভালবাসার প্রস্তাব দেয়। তানিয়ার জঙ্গি-যোগাযোগ সম্ভবত ওই যুবকের মাধ্যমেই।
এ দিন দুপুরে তানিয়াকে বসিরহাটে আনা হলে এসটিএফের আইজি অজয় নন্দ এবং বারাসত পুলিশ জেলার ডিআইজি সি সুধাকর জেরা করেন। মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণ পাল বলেন, ‘‘তানিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ, ষড়যন্ত্র, প্রতারণা এবং অসামাজিক কাজের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিচারক তাঁকে চোদ্দো দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’’
ঘটনায় থতমত গোটা গ্রাম। রোগা পাতলা চেহারার দিদিমণির সম্পর্কে কোনও কথাই যেন হজম হচ্ছে না তাঁদের। গ্রামের পাঁচ মাথা এক হলেই করোনাভাইরাস নিয়ে গত কয়েক দিনের একটানা আলোচনার স্রোতটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন তানিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy