প্রথম দফায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই বিধানসভায় শিক্ষা বিল পেশ আটকে গিয়েছিল। সংশোধনের পরে সেই বিতর্কিত বিল বিধানসভায় পেশের উদ্যোগের মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন জানিয়ে দিল, এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে তারা।
সংশোধিত শিক্ষা বিলটি কাল, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ করার কথা। এসইউসির শিক্ষক-নেতা তরুণ নস্কর মঙ্গলবার জানান, তাঁদের দলের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব স্তরের সংগঠন ওই বিল পেশের দিনেই রাস্তায় নামবে। বিলটি পাশ হলে বিধানসভা অভিযানেরও পরিকল্পনা করেছে বাম নেতৃত্বাধীন ওয়েবকুটা। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ জানান, ওই বিল তাঁরা কোনও মতেই মানবেন না।
বিল পেশের আগেই আজ, বুধবার শিক্ষক সংগঠন আবুটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিল প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবে। যাদবপুরের অন্য শিক্ষক সংগঠন জুটা বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছে। জুটা-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এই বিল আনা হচ্ছে শিক্ষা মহলের সঙ্গে আলোচনা না-করেই। এর মাধ্যমে যে-ভাবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের স্বাধিকার হরণের উদ্যোগ চলছে, আমাদের প্রতিবাদ তার বিরুদ্ধেই।’’
শিক্ষা বিলের সমালোচনায় সরব হয়েছে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতিও। ‘‘এই বিলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কলেজ পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করছে সরকার। সরকারি হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত স্পষ্ট শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতেও। এটা কখনওই কাম্য নয়,’’ বলছেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সরকার।
বিধানসভার গত অধিবেশনে ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৭’ আনতে চেয়েছিল সরকার। তবে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত রাখা হয়। কিছু সংশোধন-পরিমার্জনের পরে আবার সেই বিল আনার উদ্যোগ চলছে বিধানসভায়।
বিলে প্রথমে বলা হয়েছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষাবিদ পরিচালন সমিতির সভাপতি হবেন, সেটা সরকারই ঠিক করে দেবে। বিরোধী শিবির এতে আপত্তি তোলে। আপত্তি ওঠে শাসক দলের অন্দরেও। তাদের আপত্তির কারণ অবশ্য আলাদা। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান, এই বদল হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলের আর কোনও প্রভাবই থাকবে না। তড়িঘড়ি বিল পেশ আটকে দেওয়া হয়। পরে সংশোধন করে ঠিক হয়েছে, শিক্ষাবিদ নয়, কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হতে পারবেন যে-কোনও শিক্ষানুরাগী। শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাবিদ হতে গেলে শিক্ষার নির্দিষ্ট কয়েকটি ধাপ অন্তত পেরোতেই হয়। শিক্ষানুরাগ দেখানোর জন্য তার দরকার নেই। তাই সংশোধনের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরাবুল ইসলামদের মতো শাসক দলের নেতাদের ছড়ি ঘোরানোর রাস্তাই খোলা রাখা হল।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির কর্তা থেকে শিক্ষক, অধ্যক্ষ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী— সকলকেই ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল বিলের প্রাথমিক খসড়ায়। নতুন বিলে সেই অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশ মানা না-হলে আদত বিলে বেতন কাটার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা দফতরের হাতে। সেই ধারাটিও বাদ যাচ্ছে নতুন বিলে।
সংশোধিত বিলে অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ বা টিচার-ইনচার্জের হাতেও সমান ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরার খতিয়ান রাখতে বায়োমেট্রিক কার্ড চালু করার প্রস্তাব ছিল পুরনো বিলে। পরিমার্জিত বিলে বায়োমেট্রিক শব্দটির উল্লেখ নেই। তবে তাতে বলা হয়েছে, শিক্ষা দফতর মনে করলে কলেজের সময়ানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
এখন বেশ কিছু কলেজের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য তহবিলের টাকা অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষারা নিজেদের মতো করে ব্যাঙ্কে বা বিমা সংস্থায় রাখেন। সরকার ঠিক করেছে, এখন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ কলেজের সব তহবিলের অর্থ ট্রেজারিতেই রাখতে হবে। যা সিএজি-র অডিটের আওতায় থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy