তাঁরা বিজেপি এবং তৃণমূলের রাজনীতির শিকার এবং দুই রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে তাঁদের বলি করেছে-এমনটাই মনে করছেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’-এর শিক্ষকরা। ওই সংগঠনের কয়েক জন শিক্ষক দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই ওই সংগঠনের তরফে মেহেবুব মণ্ডল বলেন, “আমরা বিজেপি এবং তৃণমূলের রাজনীতির শিকার। এই ‘অপকর্মে’ অনুঘটকের কাজ করেছে সিপিএম। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, “২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হতে কেন আমাদের বলি দেওয়া হচ্ছে?”
মেহেবুব বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের রিভিউ করার জন্য আবেদন করব। সে জন্য কিছুটা সময় লাগবে। আইনি সহায়তা দরকার। সরকারের জানা দরকার, আমরা যারা যোগ্য, তারা কেউ কারও বদান্যতায় চাকরি পাইনি। কোনও দলের কুমিরের কান্নার মতো সহানুভূতিই আমাদের দরকার নেই।” মেহেবুবের মতে, “দুর্নীতি করেছে রাজ্য। আদালতের কাজ ছিল দুর্নীতি কোথায় হয়েছে, তা খুঁজে বার করা। কিন্তু আমরা আদালতে বিচার পেলাম না।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জবাবে বলেন, “ওঁরা একটা বিপদের মধ্যে আছেন বলে হয়তো ভুল বুঝছেন। কিন্তু একমাত্র তৃণমূলই ওঁদের পাশে আছে। বিজেপি আর সিপিএম রাজনৈতিক লাভের লক্ষ্যে চাকরি খেয়েছে।” রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “যোগ্য, অযোগ্য আলাদা করার দায়িত্ব ছিল রাজ্যের। কিন্তু তৃণমূল করেনি। এর মধ্যে বিজেপিকে টানার অর্থ কী?” তাঁর দাবি, “এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে বিজেপি-ই।” সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “আমি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা করেছিলাম। এখানে সিপিএম কী করল? তৃণমূল-বিজেপি, এই দুই দল বেকায়দায় পড়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে হাওয়া ঘোরাতে চাইছে। এই বোধবুদ্ধি নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা আদৌ শিক্ষক হওয়ার যোগ্য কিনা, সেই নিয়ে প্রশ্ন জাগছে।”
ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’ ডিসেম্বর মাসে টানা ৪৮ দিন ধরে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেছিল। ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়, কলকাতায় ফিরে ফের তাঁরা আরও বড় আন্দোলনে নামতে পারেন। মেহেববু বলেন, “ক্যানিংয়ের শিক্ষিকা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। সবাইকে বলেছি, গোপনে মুখ লুকিয়ে আত্মঘাতী হবেন না। কলকাতায় ফিরে লড়াই শুরু হবে।” মেহেবুবের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলেছেন। সেখানে যাব কি না, তা রবিবার জানাব আমরা।”
ওই সংগঠনের আর এক শিক্ষক বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, “আমার নিজের এবং স্ত্রীরও চাকরি গিয়েছে। কী ভাবে সংসার চলবে, জানি না। শুনছি, আংশিক সময়ের শিক্ষকতার করার কথা বলা হতে পারে। পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি করার পরে আংশিক সময়ের শিক্ষক হব না।” বৃন্দাবনের মতে, “সব তথ্য সুপ্রিম কোর্টে পেশের পরে এমন রায় কেন হল, জানি না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)