বিশেষ করে অতিমারিতে দেড় বৎসরাধিক কাল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু স্কুলের পরিকাঠামোর হাল খুবই খারাপ। ফাইল ছবি
প্রথম হলেই হয় না। ক্রিকেট হোক বা শিক্ষা, শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে হলে চাই নিয়মিত অনুশীলন। চাই ঘাটতি-খামতি খুঁজে বার করে তা পূরণ করার মানসিকতা ও শ্রম। কেন্দ্রীয় মূল্যায়নে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সেরার শিরোপা পাওয়ার পরে শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য এটাই। প্রাথমিক স্কুলের বেশ কিছু প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা বলছেন, দ্রুত পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী চাই। উন্নয়ন দরকার পরিকাঠামোরও। সর্বোপরি চাই প্রথম স্থান ধরে রাখার সঙ্কল্প ও অনুশীলন। অন্যথায় ‘ফার্স্ট বয়’-এরও পিছিয়ে পড়তে দেরি হবে না, সতর্ক করে দিচ্ছেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় র্যাঙ্কিংয়ে ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি ও নিউমেরেসি সূচকে বাংলা রয়েছে প্রথম স্থানে। প্রাথমিক শিক্ষায় দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের মতে, অবিলম্বে পরিকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। বিশেষ করে অতিমারিতে দেড় বৎসরাধিক কাল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু স্কুলের পরিকাঠামোর হাল খুবই খারাপ। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্কুলে যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষক না-হলেই নয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবল সামন্ত জানান, লকডাউনে ১৮-২০ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম বেহাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ অব্যবহারে মিড-ডে মিলের অধিকাংশ সামগ্রীর হাল খুব খারাপ। অবিলম্বে গ্যাস ওভেনের মেরামতির প্রয়োজন। সুবলবাবু বলেন, ‘‘আমপান ও ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে আমাদের স্কুলের শৌচালয়ের ছাউনি নেই। এগুলো ঠিক না-করলে স্কুল খুলবে কী করে?’’ তাঁদের স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছ’টি ক্লাসের জন্য পাঁচ জন শিক্ষক। অর্থাৎ শ্রেণি ও পড়ুয়া অনুপাতে শিক্ষক নেই। স্কুলে কয়েক বছর আগে পঞ্চম শ্রেণি চালু হলেও তার জন্য এখনও শিক্ষক মেলেনি বলে জানাচ্ছেন সুবলবাবু।
পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষকের অভাবটাই এখন প্রাথমিক স্কুলগুলির সব থেকে বড় সমস্যা। গ্রামের দিকে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক কম, ছাত্রছাত্রী বেশি। শহরের ছবিটা অনেক ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। সেখানকার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক বেশি, পড়ুয়া কম।’’ তাঁদের স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫৭ জন পড়ুয়া। শিক্ষক মাত্র পাঁচ জন। বাঁকুড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমরেন্দ্র মণ্ডল জানান, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ৩০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন শিক্ষক থাকার কথা। অথচ তাঁদের স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি শ্রেণির জন্য শিক্ষক মাত্র দু’জন। সমরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিকে একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস নিতে হয়। এ ভাবে কি ঠিকঠাক পাঠদান সম্ভব?’’ সেই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, কোনও প্রাথমিক স্কুলেই অশিক্ষক কর্মী নেই। কর্মী নিয়োগ করা দরকার।
অনেক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ কাল স্কুল বন্ধ থাকায় মিড-ডে মিলের সরঞ্জাম শুধু যে নষ্ট হয়েছে তা-ই নয়, চুরিও হয়ে গিয়েছে। শিক্ষা দফতরের সম্প্রতি একটি
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানতে চেয়েছিল, কোন স্কুলের পরিকাঠামো কেমন আছে। মিড-ডে মিলের সামগ্রী ঠিকঠাক আছে কি না, স্কুলে কী কী প্রয়োজন— এ-সব তথ্য বাংলা শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করতে হবে।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, ‘‘দীর্ঘ কাল বন্ধ থাকায় প্রায় সব স্কুলেরই মেরামতির জন্য বাড়তি সরকারি অনুদান প্রয়োজন। কিন্তু স্কুলগুলি অনুদান পাচ্ছে না। স্কুল খুলতে যত দেরি হবে, পড়াশোনার মান খারাপ হতে থাকবে প্রাথমিকে।’’
করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের পড়ুয়ারাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে করেন ওই স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। রঘুনাথপুরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের দিকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার বিষয়ে বেশির ভাগ অভিভাবকদের ধারণা এতই কম যে, অনেকে জানেনই না, তাঁদের ছেলে বা মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে। শুধু মাসে মাসে মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী নেওয়ার জন্য স্কুলে এসে তাঁরা প্রশ্ন করেন, পরের মাসের রেশন কবে পাওয়া যাবে? কোনও কোনও অভিভাবক অবশ্য বলেন, ছেলের তো অক্ষরজ্ঞানই হল না। অথচ গত দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy