ফাইল চিত্র।
নিছক লিখিত পরীক্ষায় শিক্ষকপদ প্রার্থীর সামগ্রিক মূল্যায়ন কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে এটাই জানাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। শুধু লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে স্কুলশিক্ষক নিয়োগের প্যানেল তৈরির নতুন নিয়মের তীব্র বিরোধিতা করে তাদের বক্তব্য, এত দিন এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় ইন্টারভিউ এবং প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ বিভিন্ন ডিগ্রি বিবেচনা করার যে-নিয়ম ছিল, তা বাতিল করলে চলবে না।
উচ্চ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই কলকাতা গেজেটে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তি বলছে, শিক্ষকপদ প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে শুধু লিখিত নিয়োগ-পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরই বিবেচিত হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডিগ্রির নম্বর বিবেচনায় আসবে না। ইন্টারভিউ বা কাউন্সেলিংও হবে না।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কিছু দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচুর জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বার বার আটকে যায়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সরল ও স্বচ্ছ করা হবে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া সরল করতে গিয়ে শিক্ষা দফতর যে-পদক্ষেপ করছে, বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠনই তা মানতে পারছে না। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভাল শিক্ষাগত যোগত্যসম্পন্ন প্রচুর মেধাবী ছাত্রছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দিতেন। এখন শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডিগ্রির নম্বর বিবেচিত না-হলে মেধাবীরা শিক্ষকতা করার উৎসাহ হারাবেন। শিক্ষকতার পেশায় কম আসবেন তাঁরা। শুধু লিখিত নিয়োগ-পরীক্ষা কোনও শিক্ষকের যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না।’’ কৃষ্ণবাবুর মতে, ইন্টারভিউও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক জন শিক্ষক ক্লাসে কী রকম পড়াবেন, ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো ব্যক্তিত্ব সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর আছে কি না, প্রার্থীর কোনও মুদ্রাদোষ আছে কি না— এই সব কিছুই দেখা হয় ইন্টারভিউয়ে।
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের মতে, এসএসসি-র নতুন নিয়োগ পদ্ধতি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থারই ক্ষতি করবে। তিনি জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে বাম আমলে এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৯৮-এর আগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে-পদ্ধতি চালু ছিল, তার স্বচ্ছতা নিয়ে নানান অভাব-অভিযোগ উঠেছিল বলেই এসএসসি চালু হয়। নববাবু বলেন, ‘‘নতুন যে-নিয়ম চালু হচ্ছে, তা আদৌ বিজ্ঞানসন্মত নয়। আমরা এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখছি।’’ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদাম জানা বলেন, ‘‘যে-সব শিক্ষকপদ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ভাল, তাঁদের পৃথক মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু নতুন নিয়মে তাঁদের কোনও মর্যাদাই থাকছে না। মূল্যায়ন যথাযথ হবে কি না, প্রশ্ন থাকছেই। আমরা এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেব।’’
শিক্ষক সমিতির একাংশের মতে, এর ফলে নতুন নিয়মে দুর্নীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। শুধু লিখিত নিয়োগ-পরীক্ষায় স্বজন পোষণের সূত্রে অযোগ্য প্রার্থী ঢুকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শুধু লিখিত পরীক্ষাতেই তো সব যোগ্যতার বিচার হয়ে যায়। বরং ইন্টারভিউয়ে স্বজনপোষণের আশঙ্কা থাকে।’’ দিব্যেন্দুবাবুর মতে, নতুন নিয়মে লিখিত পরীক্ষার খাতা তিন বছর সংরক্ষণ করা হবে। কারও কোনও সন্দেহ হলে আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করে তা নিরসনের সুযোগ থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy