কিন্তু সেখানেও ফাঁকিবাজির অভিযোগ আসছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কমিটির প্রস্তাব, সপ্তাহে ন্যূনতম ৪২ ঘণ্টার ডিউটির মধ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকেরা কত ক্ষণ পড়াচ্ছেন, সেই বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রতীকী ছবি।
তাঁরা শিক্ষক। তাঁরা চিকিৎসকও। নিয়মনিষ্ঠ হয়ে চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া যাঁদের ব্রত, তাঁদেরই একাংশ নিয়মানুবর্তিতা জলাঞ্জলি দিয়ে নিয়ম করে ফাঁকি দিয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ, কখনও একক ভাবে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে তো কখনও রীতিমতো যোগসাজশ করে। তাঁরা জেলার মেডিক্যাল কলেজে সব মিলিয়ে সপ্তাহে দু’-তিন দিনের বেশি কাজ করছেন না। হাসপাতালে অনেক সময়েই প্রয়োজনে তাঁদের দেখা মিলছে না। অথচ হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে প্রতিদিন! এমনকি হাসপাতালে থাকলেও তাঁরা ঠিকমতো কাজ করছেন না। দীর্ঘকাল ধরেই ওই শিক্ষক-চিকিৎসকেরা এই ধরনের এক ‘অলিখিত নিয়মে’ নিয়ম ভেঙে চলেছেন বলে অভিযোগ।
এই প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে এ বার শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাজের নির্দিষ্ট ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা তৈরির পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি সরকারি মেডিক্যাল অফিসার এবং অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মীর জন্য নিয়ম মেনে ডিউটি রস্টার তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দফতরের ঘোষিত নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সপ্তাহে কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতেই হবে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস’-এর অধীনে থাকা শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাজের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দফতর চার সদস্যের কমিটিও গঠন করেছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট কয়েক দিন আগে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে। ‘‘ওই রিপোর্ট বিবেচনা করে শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাজের একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা হবে,’’ বলেছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
সহকারী, অ্যাসোসিয়েট এবং প্রফেসর— এই তিনটি স্তরের শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের অধীনে। এক জন প্রফেসর-চিকিৎসক থাকেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, ওই শিক্ষক-চিকিৎসকদের সপ্তাহে ন্যূনতম কত ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে, তা আগেও বলা ছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক শ্রেণির শিক্ষক-চিকিৎসক তা মেনে চলছেন না বলে অভিযোগ। ফাঁকির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, কোনও কোনও শিক্ষক-চিকিৎসক কলকাতা থেকে জেলায় গিয়ে টানা দু’দিন সেখানে ডিউটি করে ফিরে আসছেন। কখনও আবার মাসে মাত্র দু’দিন যাচ্ছেন। এর জন্য শিক্ষক-চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে ‘ব্যবস্থাপনায়’ রীতিমতো পালা করে এটা করছেন। ফলে রোগীদের প্রয়োজনে অনেক সময়েই ওই সব চিকিৎসককে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘এক শ্রেণির শিক্ষক-চিকিৎসক দীর্ঘকাল ধরেই এমন ফাঁকিবাজি চালাচ্ছেন। তাতে নাম খারাপ হচ্ছে সকলের।’’
শুধু জেলা নয়, শহরের মেডিক্যাল কলেজেও দিনের মধ্যে একটা সময়ের পরে এক শ্রেণির চিকিৎসককে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, চার সদস্যের কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী সপ্তাহে (ছ’দিন) কমপক্ষে ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করতেই হবে। বিভাগীয় প্রধানকে সেই অনুযায়ী ডিউটি রস্টার তৈরি করতে হবে এবং তা মানতে হবে শিক্ষক-চিকিৎসকদের। তাঁদের যোগ দিতে হবে অস্ত্রোপচারেও। রবিবার ঘুরিয়েফিরিয়ে ডিউটি থাকবে। সকলে রবিবার ছুটি পাবেন না। একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে হবে কর্তব্যরত শিক্ষক-চিকিৎসকদেরও। সব শিক্ষক-চিকিৎসক রস্টার মেনে আসছেন কি না এবং কাজ করছেন কি না, হাসপাতালের অধ্যক্ষ বা সুপারের কাছে পেশ করা সাপ্তাহিক রিপোর্টে তা জানাতে হবে বিভাগীয় প্রধানকে।
কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিজের ইউনিটের পাশাপাশি অন্যান্য ইউনিটের কাজকর্মের বিষয়েও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে বিভাগীয় প্রধানদের। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পড়ুয়া-চিকিৎসকদের ক্লাস নেওয়া শিক্ষক-চিকিৎসকদের একটি বড় কাজ। কিন্তু সেখানেও ফাঁকিবাজির অভিযোগ আসছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কমিটির প্রস্তাব, সপ্তাহে ন্যূনতম ৪২ ঘণ্টার ডিউটির মধ্যে শিক্ষক-চিকিৎসকেরা কত ক্ষণ পড়াচ্ছেন, সেই বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy