চুক্তি সই। টাটা মেটালিক্সের এমডি সঞ্জীব পলের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টর (প্রশিক্ষণ) এস কে প্রামাণিক। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রও। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে এ বার প্রশিক্ষণ দেবে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থা টাটা মেটালিক্স।
কারিগরি শিক্ষা দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে মেদিনীপুরের আইটিআই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতি বছর ১২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে টাটা মেটালিক্সের সঙ্গে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হয় রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের। যেখানে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ছাড়া ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী অসীমা পাত্র। এ দিনের সমঝোতা চুক্তি অনুষ্ঠানে টাটা মেটালিক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পল ছাড়া টাটা স্টিল-সহ গোষ্ঠীর অন্য কয়েকটি সংস্থার কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের টাটা মেটালিক্সের সদস্যদের সামনে নতুন কারখানা গড়ার ব্যাপারে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘‘যদি রাজ্যে অন্য আরও একটি কারখানা গড়ায় আপনাদের আগ্রহ থাকে, তা হলে জমির কোনও সমস্যা হবে না। আমাদের জমি আছে। জমি ব্যাঙ্ক রয়েছে, জমির মানচিত্রও আছে।’’ বুধবার সিঙ্গুরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী টাটা গোষ্ঠীকে রাজ্যে বিনিয়োগের বার্তা দিয়েছিলেন। তার জন্য তিনি গোয়ালতোড়ে জমির ব্যবস্থাও করে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রশিক্ষণের জন্য শ্রেণিকক্ষ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাকি যন্ত্রপাতি, শিক্ষক-সহ প্রশিক্ষণ পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব থাকবে টাটা মেটালিক্সের। সঞ্জীব পল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ায় আমাদের অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। যত শীঘ্র সম্ভব আমরা এই প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে দেব।’’ কল, ইলেকট্রিক, কাঠের মিস্ত্রি-সহ পরিষেবা শিল্প এবং দক্ষ নিরাপত্তা কর্মী হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বছরে ছ’ লক্ষ ছেলে-মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। যারা অনেকেই বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পাচ্ছে। সরকারের দাবি, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বড় বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন আইটিআই-এ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। তাদের মধ্যে রেমন্ডস, স্যামসুং, মারুতি রয়েছে। হুন্ডাইও এ রাজ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় আগ্রহ দেখিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যে এখন ১৪৬টি পলিটেকনিক ও ২২৭টি আইটিআই রয়েছে। মেদিনীপুর ছাড়া অন্য আইটিআই-তেও প্রশিক্ষণ শুরু করার জন্য তিনি টাটা মেটালিক্স-সহ বেসরকারি সংস্থাগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের দিক থেকে যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা করা হবে।’’
বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য টাটা মেটালিক্সের সঙ্গে রাজ্যের গাঁটছড়ার প্রেক্ষিতে প্রশাসন ও শিল্পমহলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, সিঙ্গুরের প্রকল্পের সময় থেকেই এই উদ্যোগ শুরু হয়। এবং তার সূচনা হয়েছিল সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীরই অন্যতম সংস্থা টাটা মোটরসের হাত ধরে। টাটা মেটালিক্স টাটা গোষ্ঠীর আর এক সংস্থা টাটা স্টিলের শাখা। সিঙ্গুরের পরে রাজ্যে প্রস্তাবিত বিভিন্ন বড় শিল্প তালুকের মূল লগ্নিকারী সংস্থাকে জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের শর্ত বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম।
তেমন কোনও শর্ত ছাড়াই অবশ্য দক্ষ কর্মী গড়তে টাটা মোটসরস রাজ্যের বিভিন্ন আইটিআই-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে। সিঙ্গুরের স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্যদের সেই প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল। কয়েক’শো যুবক সেই প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। অন্য দিকে, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বল্প-শিক্ষিতদের জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দু’সপ্তাহ থেকে দু’বছর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হয়। অদক্ষ কর্মীদের জন্য বাগান করা, মহিলাদের ক্যান্টিন পরিষেবার প্রশিক্ষণ দেওয়াও হয়েছিল। তাঁরা একটি ক্যান্টিন-ও চালাচ্ছিলেন।
টাটারা সিঙ্গুর থেকে চলে যাওয়ার আগেই ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ হিসেবে এই ব্যবস্থাকে চুক্তিতে শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয় নিগম। শিল্প দফতর, নিগম, কারিগরি শিক্ষা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন শিল্প দফতরেরই অধিকর্তা। ঠিক হয়েছিল, অন্ডালের বিমাননগরী, রঘুনাথপুরের বিভিন্ন ইস্পাত পার্ক, পানাগড় ও সালানপুরের মতো শিল্পতালুকে মূল লগ্নিকারী সংস্থাকে এ ধরনের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy