Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Price Hike

অভিযান শুরু হতে না হতেই সস্তা হল টম্যাটো, মমতার নির্দেশে বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ

কিছু জেলায় টম্যাটোর মতো সব্জির দাম কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এক জেলায় আবার সাধারণ মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে সব্জি তুলে দিতে এগিয়ে এসেছে জেলা পরিষদ। কম দামে সব্জি বিক্রি করছে তারা।

মেদিনীপুর বাজারে অভিযান টাস্ক ফোর্সের।

মেদিনীপুর বাজারে অভিযান টাস্ক ফোর্সের। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ১৫:৫০
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবারও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হানা দিল টাস্ক ফোর্স। কোথাও কোথাও বুধবারের হানার পর কাঁচা আনাজের দাম কমেছে বলে দাবি করেছেন বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের একাংশ। কিছু জেলায় টম্যাটোর মতো সব্জির দাম কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। এক জেলায় আবার সাধারণ মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে সব্জি তুলে দিতে এগিয়ে এসেছে জেলা পরিষদ। কম দামে সব্জি বিক্রি করছে তারা। কলকাতায় দু’টি বাজারে আবার অভিযোগ উঠেছে, টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা চলে যাওয়ার পর বেড়ে যাচ্ছে আনাজের দাম।

মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, ১০ দিনের মধ্যে আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাঁর নির্দেশ ছিল, ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের রুখতে বাজারে বাজারে অভিযান চালাবে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ এবং পুলিশ। সঙ্গে থাকবে এসটিএফ এবং সিআইডি-ও। টাস্ক ফোর্সকে প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে বসারও নির্দেশ দেন তিনি। এর পরেই সক্রিয় হয় টাস্ক ফোর্স। বৃহস্পতিবার কলকাতার মানিকতলা এবং কলেজ স্ট্রিটের কাছে বর্ণপরিচয়ে হানা দেয় টাস্ক ফোর্স। বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করা হয়, কেন দাম বেশি আনাজের। অভিযোগ, টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা চলে যাওয়ার পর দাম আবার বেড়ে যাচ্ছে আনাজের।

হুগলি জেলার বাজারগুলিতে বৃহস্পতিবারও নজরদারি চালানো হয়েছে। বুধবার সকাল এবং সন্ধ্যা, দু’বেলাতেই অভিযান চালায় প্রশাসন। খুচরো বাজারে কাঁচা আনাজের দাম কিছুটা হলেও কমছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। এক কেজি বেগুনের দাম ১২০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০০ টাকা। হুগলির বাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, পটল, ঝিঙে, বরবটি, চিচিঙ্গের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছে। করলা, কাঁকরোলের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমেছে। এক কেজি টম্যাটোর দাম ছিল ১০০ টাকা। তা কমে ৫৫ টাকা হয়েছে। এক কেজি কাঁচালঙ্কার দাম ছিল ১৫০ টাকা। তা কমে হয়েছে ১২০ টাকা। সিঙ্গুর, তারকেশ্বরেও চলছে অভিযান।

হাওড়ার বিভিন্ন বাজারেও চলেছে প্রশাসনের নজরদারি। টাস্ক ফোর্সের কর্তাদের কাছে আনাজের দামবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। বাজার করতে আসা মানুষজনের একাংশের দাবি, নজরদারির পর কমেছে আনাজের দাম।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বসিরহাটে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রশাসনের তরফে তেমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র বসিরহাট ২ নম্বর ব্লকের খোলাপোতা বাজারে টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকেরা এসে বাজারদর যাচাই করেছেন। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোন সব্জি কত দামে বিক্রি হচ্ছে, কোন সব্জি কত দামের পাইকারি বাজার থেকে কেনা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, আনাজের বাজারদর একই রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার পুরসভা বাজারে হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ এবং কৃষি বিপণন দফতর। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন আধিকারিকেরা। কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক অর্ক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকেই আমাদের অভিযান চলছে জেলার বিভিন্ন বাজারে। জোগান কম থাকায় কিছু সব্জির দাম বৃদ্ধি পেলেও অধিকাংশ সব্জির দাম কমেছে। আশা করি, খুব দ্রুত সব সব্জির দামই কমবে।’’

অন্য দিকে, পূর্ব বর্ধমানে বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে সব্জি বিক্রি করা হয়েছে। বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে সব্জি কিনতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। বর্ধমান সংস্কৃত লোকমঞ্চের সামনে সব্জির দোকানগুলি খোলা হয়। তার আগে চলে মাইকিং। জেলাশাসক কে রাধিকা আইআর বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য আলুর পাশাপাশি অন্যান্য সব্জি চাষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। দামও অনেক বেড়েছে। দাম কমাতে আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বাজারেও অভিযান চলছে। কেউ কোনও বেআইনি কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানান, কিছু ‘অসাধু’ লোক এই মূল্যবৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। তাঁদের খুঁজে বার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ এই ‘ফড়েদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। কম দামে সব্জি বিক্রির পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা এবং রানিগঞ্জ-সহ একাধিক খুচরো এবং পাইকারি বাজারে অভিযান চালানো হয়। বেশি দাম যাঁরা চাইছেন, তাঁদের সতর্ক করা হয়। এক জন বিক্রেতা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। আধিকারিক সৌভিক সাহা জানান, তাঁরা ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন। রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আর এক আধিকারিক আকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সুফল বাংলার স্টলে দু’-এক টাকা কমে আলু, পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বুধবারই পূর্ব মেদিনীপুরে একাধিক বাজারে নজরদারি শুরু করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবারও চলেছে অভিযান। মহিষাদল বাজারে স্থানীয় বিডিও, ওসি-সহ আধিকারিকেরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। দাবি, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব্জির দাম কমাতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে শসা, টম্যাটোর দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এক কেজি টম্যাটোর দাম ছিল আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বৃহস্পতিবার তা হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। শসার দাম হয়েছে ৪০ টাকা। আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা।

সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বাজারেও চলেছে অভিযান। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর কোতোয়ালি বাজার ঘুরে দেখেন মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খান। সঙ্গে ছিলেন পুরসভার আধিকারিকেরা। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। অতি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে দাবি সৌমেনের।

বৃহস্পতিবার কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজারে টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিরা অভিযানে নামেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। আগামী দিনে বিভিন্ন হাটেও তাঁরা যাবেন বলে জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারগুলিতে সব্জি কত দরে বিক্রি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুধবার আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আলুর দামটা তাঁরা কম বলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাজারে এসে দেখছি আলুর দাম কিছুটা বেশি। অন্যান্য সব্জি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লঙ্কার দাম স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বেশি। ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার জেলা প্রশাসন এবং পাইকারি সব্জি বিক্রেতাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। বর্ষাকাল বলে সব্জির দাম স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বেড়েছে।’’

দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও সব্জির দামের হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। জেলা প্রশাসন সূত্রে সে ভাবে কোনও নজরদারি এখনও শুরু হয়নি বালুরঘাটের পাইকারি বা খুচরো বাজারগুলিতে। যার ফলে প্রতিটি সব্জির দাম আকাশছোঁয়া। গত সপ্তাহ থেকেই বালুরঘাটের খুচরো বাজারে আলু ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, টম্যাটো ১০০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, ভেন্ডি ৩০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, ফুলকপি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৩০ টাকা, আদা ২৫০ টাকা, রসুন ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিলিগুড়ির পাইকারি থেকে খুচরো বাজারগুলিতে হানা দেয় টাস্ক ফোর্সের একটি প্রতিনিধি দল। শিলিগুড়ির রেগুলেটেড বাজারে প্রায় প্রতিটি দোকান ঘুরে দেখে তারা। এর পরই সেখান থেকে বেরিয়ে চম্পাশরি এবং বিধান মার্কেটের খুচরো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন সদস্যেরা। টাস্ক ফোর্সের তরফে জানানো হয়েছে, পাইকারি এবং খুচরো বাজারে দামের মধ্যে বিরাট ফারাক নেই৷ চার থেকে পাঁচ টাকার ফারাক রয়েছে। আগামী দিনেও চলবে নজরদারি। এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ ফারুক মহম্মদ বলেন, ‘‘আমরা পাইকারি থেকে খুচরো বাজারে গিয়ে দামের তারতম্যের হিসেব রাখছি। চাষিদের থেকে কী দামে কেনা হচ্ছে, বা সাধারণ মানুষ কত দামে খুচরো ব্যবসায়ীদের থেকে কিনছেন, সে হিসাব আমরা নথিভুক্ত করছি। তবে খুব একটা যে দামের হেরফের রয়েছে, সেটা দেখছি না। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমরা কৃষি, ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের আধিকারিক-সহ মার্কেটিং টিমের সকলকে নিয়ে পরিদর্শন করছি।’’

কৃষি দফতরের যুগ্ম ডিরেক্টর দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘সকাল থেকেই শিলিগুড়ির চম্পাশরী বাজার থেকে শুরু করে খুচরো বাজার সব জায়গাতেই আমরা ঘুরছি। পাঁচ থেকে ১০ টাকা, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিন থেকে চার টাকার হেরফের রয়েছে।’’ অন্য দিকে, বিধান মার্কেটের সব্জি ব্যবসায়ী সুশান্ত দে বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। প্রতি দিনই দামের হেরফের চলছে। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে সব্জির দাম।’’ ব্যবসায়ী সুনীল মহন্ত বলেন, ‘‘আমাদের নির্ভর করতে হয় নিয়ন্ত্রিত বাজারের উপর। সেখানেই যদি দাম বর্ধিত থাকে, তা হলে আমাদের কিছু করার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Price Hike Task Force market Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy