বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালি থেকে বেতন বাবদ প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। কিন্তু কোনও কাজ করেননি। আদালতে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই টাকা নিলেও তার বদলে তাপস যে-হেতু কোনও কাজই করেননি, তাই ওই বেতন বেআইনি টাকার হাতবদল ছাড়া আর কিছুই নয়। বেআইনি, কারণ রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজার থেকে ওই টাকা তুলেছিলেন। এবং সেই টাকারই একটি অংশ নিয়েছেন সাংসদ তাপস।
সিবিআই সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে তাপসের বিরুদ্ধে যে-চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ওই সাংসদ নিজে এবং নিজের পরিবারের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে রোজ ভ্যালি থেকে মোট ৫৫ লক্ষ ১০ হাজার ১৫৫ টাকা নিয়েছেন। তার মধ্যে দু’টি সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে নেওয়া বেতনের টাকা তো আছেই। রয়েছে রোজ ভ্যালির চ্যানেলে একটি রান্নার অনুষ্ঠান করার বিনিময়ে নেওয়া টাকাও। সিবিআইয়ের বক্তব্য, তাপসের স্ত্রী নন্দিনী পাল যে-রান্নার অনুষ্ঠান করেছেন বা তাপসের মেয়ে সোহিনী ‘কর্নেল’ নামে যে-ছবিতে অভিনয় করে টাকা পেয়েছেন, তার পিছনে যুক্তি থাকতে পারে। স্ত্রী-মেয়ে ছাড়াও নিজের এক ভাগ্নিকে রোজ ভ্যালি সংস্থায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন তাপস। সেই মহিলা অবশ্য সেখানে চার বছর ধরে যে-বেতন নিয়েছিলেন, তার বদলে কাজও করেছেন।
কিন্তু তাপস কার্যত ঘরে বসে ডিরেক্টর হিসেবে টাকা নিয়ে গিয়েছেন বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, তাপস যদি সেই টাকার বদলে ‘কাজ’ করতেন, তা হলে অভিযোগ তোলা যেত না। কিন্তু কোনও কাজ না-করে টাকা নিয়ে তিনি বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন এবং ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে গিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, আসলে রোজ ভ্যালির বেআইনি ব্যবসায় সাংসদ ও নায়ক হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাতেই তাঁকে নিয়মিত নানা ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
চার্জশিটের ন’নম্বর অনুচ্ছেদে অভিযোগ করা হয়েছে, রোজ ভ্যালির বিভিন্ন সংস্থার অফিসে নিজের গাড়িচালককে পাঠিয়ে নিয়মিত টাকা নিতেন তাপস। তাঁর ওই চালক যে এক বার রোজ ভ্যালির অধীন ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু কমিউনিকেশন লিমিটেড’ সংস্থার দফতরে গিয়ে ‘ডোনেশন’ বা অনুদান বাবদ দু’লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণ আছে সিবিআইয়ের হাতে। এ ছাড়াও আর কোথায় কবে এ ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে চার্জশিটে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, রোজ ভ্যালির চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান ব্যঞ্জনবর্ণ পরিচালনার জন্য তাপসের স্ত্রী নন্দিনী বেতন বাবদ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ছাড়াও ‘কস্টিউম ও প্রপার্টিজ’ খাতে প্রায় আট লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। সেই কস্টিউম বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনার বিল সংস্থার কাছে জমা দিয়েছিলেন তিনি। তাপস কিন্তু কাজ না-করেই বেতন নিচ্ছিলেন বলে চার্জশিটে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নন্দিনীদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সিবিআই যে-সব দাবি করছে, তারা তা প্রমাণ করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy