প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠকে। মৌলালি যুব কেন্দ্রে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের কংগ্রেসকে কিছুই না জানিয়ে বৃহস্পতিবার নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। পরের দিন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মন্তব্য করলেন, ‘‘দিল্লি যে সিদ্ধান্তই নিক, আপনারা শান্ত মনে মেনে নেবেন।’’ লোকসভা নির্বাচনের পরে বাংলার কংগ্রেসে এ বার জমানা বদল আসন্ন কি না, সেই জল্পনা নতুন করে গতি পেল। তবে এআইসিসি শেষ পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসে রদবদল করলেও বাংলায় বামেদের সঙ্গে সমঝোতার কৌশলে কোনও বদল আনার ভাবনা এখনও নেই বলেই কংগ্রেস সূত্রের খবর।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে কংগ্রেসের প্রত্যাশিত ফল না হওয়ার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন, এমন কথা অধীর বলেননি। বরং, দাবি করেছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম নানা রকম মশলা ছড়াচ্ছে! আমি এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আসনে আছি। সেই আসনে থেকেই এই বৈঠক ডেকেছি।’’ কিন্তু একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমি তো অস্থায়ী সভাপতি! মল্লিকার্জুন খড়্গে যে দিন থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছেন, সে দিন থেকে আর কোনও রাজ্যে সভাপতি হয়নি। এ বার যখন করবেন, তখন আপনারা দেখতে পাবেন!’’ দলেরই একাংশের প্রশ্ন, খড়্গে সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার সময় থেকেই যিনি ‘অস্থায়ী’ সভাপতি, তিনি সে কথা এত দিন পরে উল্লেখ করতে যাবেন কেন? দিল্লির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথাই বা আলাদা করে বলবেন কেন? গোটা বাতাবরণে আসন্ন পরিবর্তনের ইঙ্গিত ধরা পড়ছে বলে কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য। সূত্রের খবর, পরবর্তী বিকল্প নিয়ে এআইসিসি ভাবনা-চিন্তাও শুরু করেছে।
প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনের পরিবর্তে মৌলালি যুব কেন্দ্রে শুক্রবার বসেছিল কংগ্রেসের বৈঠক। এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর, দুই সহ-পর্যবেক্ষক বি পি সিংহ ও শরদ রাউত উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সেই বৈঠক থেকে দু’টি প্রস্তাব এ দিন গ্রহণ করা হয়েছে। একটিতে বলা হয়েছে, রাহুল গান্ধীই লোকসভায় দলের নেতার দায়িত্ব নিন। আর অন্যটির বক্তব্য, রাজ্যের সংগঠনে কোনও রদবদল প্রয়োজন মনে হলে তা করার জন্য এআইসিসি-কেই পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের নিয়ম অনুসারে, সদস্য সংগ্রহ পর্বের পরে কমিটি নতুন করে গড়তে হয়। খড়্গে সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পরে বাংলায় নতুন কমিটি হয়নি। আবার প্রদেশ সভাপতিকেও নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই দিক থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের রদবদল বকেয়াই আছে।
যুব কেন্দ্রের বৈঠকে প্রদেশ সভাপতির ইস্তফা নিয়ে কোনও কথা না হলেও পরে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীর আলাদা করে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নানা বিষয়ে মতামত নিয়েছেন। দু’টি সম্ভাবনা নিয়ে দলে চর্চা চলছে। এক, বর্ষীয়ান কোনও নেতাকে পদে এনে কাজ চালানোর সুবিধার্থে সঙ্গে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সভাপতি থাকার সময়ে যেমন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও প্রদীপ ভট্টাচার্য কাজ চালাতেন কার্যকরী সভাপতি হিসেবে। আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া। পর্যবেক্ষক মীরের বক্তব্য, ‘‘বাংলায় সংগঠনের ক্ষেত্রে কী করা হবে, সকলের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক হবে।’’
এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় কংগ্রেসের মুখ বদল হলে কি অবস্থানও বদলে যাবে? বৈঠকে এ দিন যেমন মুক্তার আহমেদ-সহ একাধিক নেতা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বে’র বিরোধিতা করেছেন। তেমনই মানস সরকারের মতো কিছু নেতা সওয়াল করেছেন, বছরের পর বছর হয় তৃণমূল নয়তো সিপিএমের হাত ধরে চলতে গিয়ে কংগ্রেস একা চলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। প্রদেশ সভাপতিকে সামনে রেখে যাঁরা ‘টিকিট বণ্টনে’ ছড়ি ঘুরিয়েছেন, তাঁদেরও এক হাত নিয়েছেন মানস। বিজেপি ও তৃণমূলের মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে সরব হয়েছেন আব্দুস সাত্তার। আবার বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে দাঁড়িয়েই এআইসিসি-র মনোভাব নিয়ে কড়া প্রশ্ন তুলেছেন সুমন রায়চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, প্রতি বার ভোটের আগে কেন জোট নিয়ে এত ‘বিভ্রান্তি’ হবে? কেন নির্বাচন চলাকালীন দিল্লির নেতারা প্রদেশ সভাপতির উদ্দেশে বলবেন, পার্টি লাইন না মানলে বেরিয়ে যেতে হবে? কেন চিদম্বরমের মতো এআইসিসি নেতারা বাংলার কংগ্রেসকে অগ্রাহ্য করে তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠক করে যাবেন? কংগ্রেস সূত্রের খবর, বাম-পথ ছেড়ে অন্য কৌশল নেওয়ার ইঙ্গিত এআইসিসি পর্যবেক্ষকেরা দলের বর্ষীয়ান নেতাদের দেননি।
আর এ সবের মধ্যে বহরমপুরে নিজের হার মেনে নিয়েও তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরেননি অধীর। কোন পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামেদের সঙ্গে জোট করা হয়েছে, তার ব্য্যাখ্যা ফের দিয়েছেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেস করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে অপরাধ! এক জন অপরাধীর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, পুলিশ-প্রশাসন সব নামিয়ে সেই ব্যবহারই করা হয়েছে আমাদের সঙ্গে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আপনি আমাকে যা খুশি করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! আমি আমার জায়গাতেই থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy