অশ্রুকুমার সিকদার। ছবি সৌজন্য: শৈবাল বসু।
রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এবং প্রাবন্ধিক অশ্রুকুমার সিকদার প্রয়াত হলেন। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭। শেষের দিকে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুখে। থাকতেন শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ায়। তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে বর্তমান।তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিদ্বজ্জন মহলে। অশ্রুবাবুর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ির মেয়র ও বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য।
আজীবন গবেষণা ও সাহিত্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত অশ্রুকুমার শেষ বয়সে কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘পাড়ায় এখন পড়শি নেই, আছে ‘লোনলি ক্রাউড’। সবাই নিজের ফ্ল্যাটের মধ্যে নিঃসঙ্গ, একা; রাস্তা দিয়ে জনপ্রবাহ বয়ে যায়, কেউ কাউকে জানে না, চেনে না। পড়শি অবলুপ্তির পথে।’
তাঁর লেখা অসংখ্য বইয়ের মধ্যে অন্যতম রবীন্দ্রনাট্যে রূপান্তর ও ঐক্য, বাক্যের সৃষ্টি: রবীন্দ্রনাথ এবং কিল মারার গোসাঁই।
অশ্রুকুমার সিকদারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই অধীনে গবেষণায় তাঁর প্রথম ছাত্র সমরেশ রায় বলেন, ‘‘সারা জীবন শিলিগুড়িতে থেকে বাংলা গদ্য ও সমালোচনা সাহিত্যে প্রায় প্রথম পুরুষ হয়ে ওঠা খুবই শ্রমসাধ্য ও কঠিন কাজ। সেটা তিনি করেছেন।’’
নিঃসঙ্গ জীবনে বইয়ের সঙ্গেই কাটাতেন অশ্রুকুমার। কলেজে চাকরি করার সময় কলেজ স্ট্রিট থেকে নিজে হাতে বই কিনে গড়ে তুলেছিলেন কলেজের নিজস্ব লাইব্রেরি। শেষ জীবনে এই বইয়ের সঙ্গেই সময় কাটাতেন তিনি। কিন্তু শেষ জীবনে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ায় সেই আজীবন বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাওয়া নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘সভা-সমিতি ছেড়ে দিয়েছি, নিতান্ত নিরুপায় না হলে বাড়ির বাইরে যাই না। নিঃসঙ্গ, একা মানুষ আমি। স্বজনেরা থাকা সত্ত্বেও ভিতরে-ভিতরে একা। একা মানুষের পড়শি নিজের কেনা, ধার করে আনা বই। কিন্তু যে মানুষের চোখ দু’টি গ্লুকোমায় আক্রান্ত, সারা দিনে যাকে চোখে আট বার ওষুধের ফোঁটা দিতে হয়, যাঁর বাবা শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, এই শেষ পড়শি বই-ও তার পাশে শেষ অবধি থাকবে কি!’
অশ্রুকুমারের লেখা প্রবন্ধ: নিঃসঙ্গ আমি, পড়শি কেবল বই
হয়তো শেষ পড়শি বইয়ের সান্নিধ্যটুকুও চলে যাওয়ার পর আর একলা থাকতে চাননি অশ্রুকুমার। পড়শির খোঁজে পাড়ি দিলেন নতুন এক দেশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy