Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Syllabus

পাঠ ছাঁটাইয়ে ক্ষতির আশঙ্কা পড়ুয়াদেরই

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আলাপ-আলোচনার পরেই ওই দুই পরীক্ষার পাঠভার কমানো হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

পাঠ্যক্রমের বোঝা কিছুটা কমায় আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের খানিকটা আপাত-সুরাহা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ‘পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ছাড়াই’ ৩০ থেকে ৩৫% পাঠ্যক্রম ছেঁটে ফেলায় জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তাঁদের বিভিন্ন সংগঠনের একাংশের বক্তব্য, যে-ভাবে পাঠ্যক্রম ছাঁটাই হল, তাতে পরবর্তী ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের লাভের থেকে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আলাপ-আলোচনার পরেই ওই দুই পরীক্ষার পাঠভার কমানো হয়েছে। পর্ষদ ও সংসদ তার পরেই ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়, কোন বিষয়ের পাঠ্যক্রম কতটা কমল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে ভৌতবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে জৈব রসায়ন, ধাতুবিদ্যা ও অজৈব রসায়নের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা আগামী দিনে উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চতর স্তরে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করবে, এতে তারা খুবই অসুবিধায় পড়বে। একই ভাবে জীবনবিজ্ঞানে অভিব্যক্তি ও অভিযোজন এবং পরিবেশের অধ্যায় সম্পূর্ণ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। পড়ুয়ারা তো ওই সব অপঠিত অংশ কখনওই আয়ত্ত করার সুযোগ পাবে না।’’

মাধ্যমিকের গণিতের পাঠ্যক্রম থেকে ত্রিকোণমিতি ও রাশিবিজ্ঞান পুরোপুরি বাদ দেওয়া মোটেই ঠিক হয়নি বলে মনে করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক অনিমেষ হালদার। তিনি বলেন, ‘‘ত্রিকোণমিতির ক্ষেত্রে ‘কোণ পরিমাপ’, ‘কোণের মান নির্ণয়’ ও ‘ত্রিকোণমিতিক অনুপাত’ সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণাগুলি পদার্থবিজ্ঞানের অঙ্ক করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। পরবর্তী ধাপে যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে, তাদের এগুলো খুব দরকার হবে।’’

আরও পড়ুন: এইচআরবিসি ছাড়লেন শুভেন্দু, তীব্র মন্ত্রিত্ব ও দলত্যাগ জল্পনা

হাওড়ার দুইল্যা পাঁচপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত জানান, গত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ের যে-সব অংশ থেকে প্রশ্ন এসেছিল, এ বছর সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংসদ। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। যেমন, বাংলায় বাদ পড়েছে ‘কলের কলকাতা’ নামে একটি প্রবন্ধ। অথচ ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে ওই প্রবন্ধ থেকে প্রশ্ন আসেনি। আবার ২০২০-র প্রশ্নপত্রে জীবনানন্দ দাশ ও সমর সেনের কবিতা থেকে প্রশ্ন এসেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ বার কাটছাঁটের পরেও সমর সেনের কবিতা পাঠ্যক্রমে রয়ে গিয়েছে। বাদ গিয়েছে জীবনানন্দের কবিতা।

আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষকে ‘ভাইরাস’ বলে কটাক্ষ অনুব্রতর, বীরভূমে ‘সাফাই অভিযান’ তৃণমূলের

বেলুড় হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দিলীপ কর মনে করেন, স্টাটিসটিক্সে যে-সব অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে, তা যুক্তিসঙ্গত নয়। স্টাটিসটিক্সে কোনও রকম ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়াই পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাবেন। দমদম সুভাষনগর হাইস্কুলের শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তিনটি অধ্যায় পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা না-করে যদি মোট ১০টি অধ্যায়ের কিছু কিছু অংশ রেখে দেওয়া যেত, তা হলে পড়ুয়াদের সুবিধা হত। ইউনাইটেড নেশন অর্গানাইজেশন, ফরেন পলিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুরো বাদ চলে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু না-জেনেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাবেন। সেটা মোটেই স্বাস্থ্যকর হবে না।

‘‘পুজোর আগেই এই পাঠ্যক্রম খসড়া আকারে বার করে শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের মতামত নিয়ে পাঠ্যাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অসন্তোষ থাকত না,’’ বলেন কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস।

এত বিতর্ক ও আশঙ্কার প্রেক্ষিতে পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার শুধু বলেন, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তা, বিভিন্ন শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরেই পাঠ্যক্রম কমানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Syllabus Cut Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy