প্রতীকী ছবি
‘কলা খাওয়া টিফিন/স্কুল-এর করিডোরে.../তোর জন্য খোলা টিফিন বক্স/ভাগ করে খাওয়া টিফিন বক্স...’, হালফিলের এক বাংলা সিনেমার গানের কয়েকটা লাইন থেকেই ছেলেবেলায় স্কুলে ভাগাভাগি করে টিফিন খাওয়ার অনেক দিনের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ছবির মতো ভেসে ওঠে।
তখন শুধুমাত্র ঘণ্টা পড়ার অপেক্ষা। ব্যাস! টিফিনের ঘণ্টা এক বার বাজলেই দৌড়োদৌড়ি শুরু। কার টিফিনে লুচি রয়েছে, কার টিফিনে আলুকাবলি, কারও টিফিনে শুধুই মুড়ি-চানাচুর। এ সবের দিকে আলাদা করে নজর না দিয়ে চলে হামলে পড়ে খাওয়া-দাওয়া। আর যে দিন বন্ধুরা আসে না স্কুলে, তখন ওই ‘খোলা টিফিন বক্স’টাও কেমন যে একা হয়ে যায়, টিফিন বক্সের মালিকের মতোই!
গ্রাম থেকে এসে সদ্য বহরমপুর শহরের একটি স্কুলে ভর্তি হয় ইন্দ্র। বৃষ্টিভেজা এক দুপুরে স্কুলের টিফিনে সোমশুভ্র, সুব্রত, ভাস্কর, সুরজিৎ, দেবাশিসেরা আড়মোড়া ভাঙাতে টিফিন এগিয়ে দেয় ইন্দ্রের দিকে। সেই শুরু। তখন পয়সা তুলে টিফিনে কেনা হত একটা আইসক্রিম। কামড় পড়ত অনেকের। গলে গিয়ে আইসক্রিমের টুকরো মাটিতে পড়ার আগেই তা শেষ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
সেই সময়ে টিফিনে স্কুলের গেটের বাইরে সাইকেল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন ‘মণিদা’। সাইকেলের পিছনের ক্যারিয়ারে বাঁধা থাকত আইসক্রিমের বাক্স। মণিদা তখন কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ছাত্রদের কাছে ‘হিরো’। মণিদা’র ব্যাপারই আলাদা। তবে ধারে আইসক্রিম দিয়ে পরের দিন বেমালুম ভুলে যেতেন। এ বার পুজোয় বন্ধুরা এক জায়গায় আড্ডা দিতে জড়ো হলে কথায়-কথায় মণিদা প্রসঙ্গ এসে পড়লে এক জন বলে—‘জানিস মণিদা মনে হয় ইচ্ছে করে ভুলে যেতেন। কারণ তখন আমাদের পকেট তো গড়ের মাঠ!’ তবে মণিদা’র সেই আইসক্রিমের স্বাদের কাছে ভ্যানিলা-স্ট্রবেরি-ম্যাঙ্গো-বাটার স্কচ-চকোবার কোথায় লাগে!
এখন পড়ুয়াদের মধ্যে বিভেদ দূর করে তাদের একসূত্রে বাঁধতে শহরের বিভিন্ন স্কুলের হাতিয়ার টিফিন বাক্স! ছাত্রছাত্রীরা যাতে একে অন্যের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খায়, সে জন্য তাদের রীতিমতো পাঠ দিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ— সে কথা শুনে বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা সুদীপ্ত ভাওয়াল, কৌশিক চক্রবর্তীরা হেসে উঠেছিলেন, যাঁরা ৮০ দশকের শেষের দিকে মাধ্যমিক দিয়ে স্কুল ছেড়েছিলেন।
সেই তাঁরা এ বছর গিয়েছিলেন মণিদা’র বাড়িতে। গিয়ে জানতে পারেন মণিদা এখনও স্কুলে যান, তবে আইসক্রিম বিক্রি করতে নয়। তাঁর নাতিকে পৌঁছে দিতে। কারণ তাঁর নাতি এখন ওই কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। হারানো মুহূর্তরাও বুঝি এ ভাবেই ফিরে ফিরে আসে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy