তেখালি সেতুর উপরে চলছে ত্রাণ বিলি। নিজস্ব চিত্র
জমি রক্ষার লড়াইয়ে এক সময় পাশে না পাওয়ার অভিযোগ যেমন ছিল। তেমনই তা নিয়ে ক্ষোভও ছিল। কিন্তু এত বছর ধরে নন্দীগ্রাম ও খেজুরির মানুযের মধ্যে থাকা সেই ‘বিদ্বেষ’ ঘুচিয়ে দিল করোনা আর আমপান। এই দুই শত্রুর মোকাবিলায় এক একসাথেই লড়াইয়ে নেমেছেন নন্দীগ্রাম ও খেজুরির মানুষ।
খেজুরি-১ ব্লকের জাহানাবাদ গ্রামে সেই ছবিই ধরা পড়ল। তালপাটি খালের উপরে কংক্রিটের সেতু। সেখানেই ছোট লাউডস্পিকারে বেজে চলেছে, ‘আমরা করব জয়’। গত ২০ মে আমপানে বরবাদ হয়ে গিয়েছে খেজুরি-১ ও ২ ব্লক এবং নন্দীগ্রাম এলাকা। জমি রক্ষার লড়াইয়ে স্বজন হারিয়েছিল, সম্পত্তি খুইয়েছিল নন্দীগ্রাম আর খেজুরি। সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। তারপর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হল তালপাটি খালের দুই প্রান্তের দুই জনবসতিকে।
স্থানীয় কয়েকজন যুবক, খেজুরি সৎসঙ্গ এবং নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের বেশ কয়েকজন প্রাক্তনী মিলে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাদের হাত ধরেই তালপাটি খালের উপরে কংক্রিটের সেতুর দুই প্রান্তের বাসিন্দারা নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। নন্দীগ্রাম থেকে আসা কেউ বলছেন, পানের বরজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার খেজুরির জাহানাবাদের বছর চল্লিশের এক মহিলা চোখের জল মুছতে মুছতে জানাচ্ছেন তাঁর ঘরের টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। সারানোর মতো অর্থ নেই। নন্দীগ্রাম থেকে আসা কেউ বলছেন, ‘‘পুকুরে গাছ ভেঙে পড়েছে। সব মাছ মরে জলের উপরে ভাসছে।’’ জমি রক্ষার লড়াইয়ে খেজুরির মানুষকে পাশে না পাওয়া নিয়ে যে শত্রুতা ছিল, আমপানের ক্ষতি সেই শত্রুতা ভুলিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির দুঃখ একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে খেজুরি এবং নন্দীগ্রাম।
খেজুরির জাহানাবাদ, কামারদা, কলাগাছিয়া, বাহারগঞ্জ, দেউলপোতা এবং নন্দীগ্রামের রানিচক, টাকাপুরা গ্রামের পাশপাশি খেজুরি-২ ব্লকের কষাড়িয়াতে পৃথক শিবির করে মহিলাদের নতুন কাপড়, শুকনো খাবার, ত্রিপল এবং ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করে কলকাতার একটি সংস্থা। করোনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতবিক্ষত খেজুরি এবং নন্দীগ্রাম যে এভাবে মিশে যাবে, তা বোধহয় উপলব্ধি করতে পারেননি বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষজন। তাই নতুন ভাবে বাঁচার শপথ নিতে তালপাটি খালের দিকে স্থানীয় উদ্যোগে লাগানো হয়েছে বেশ কিছু গাছ।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীদের পক্ষে শ্যামল কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে লড়াই ভুলে খালের দুই প্রান্তের মানুষকে যে ভাবে পরস্পরের দুঃখ ভাগ করে দেখলান তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন সামন্ত বলেন, ‘‘তালপাটি খালের দুই প্রান্তের দুই জনপদ যাতে এক আত্মা হয়ে মিশে থাকে, তার জন্য সংযোগস্থলে গাছ লাগানো হল। এই গাছ নতুন প্রজন্মের কাছে বার্তা দেবে কী ভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় খেজুরি এবং নন্দীগ্রামের মানুযের মধ্যে পুরনো শত্রুতাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy