মেঘনাদ পাল এবং স্বদেশ দাস— নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শনিবার সেই নির্দেশ মেনে প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ ব্লক তৃণমূল সভাপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী। তিনিই ফোনে ব্লক সভাপতি অপসারণ এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার সূচনা করেছেন।
জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মোট পাঁচ জন ব্লক সভাপতিকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এঁদের মধ্যে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সভাপতি মেঘনাদ পাল স্বীকার করেছেন, শনিবার সকালে শিশির তাঁকে ফোন করে ব্লক সভাপতির পদ থেকে অপসৃত করার বার্তা দিয়েছেন। তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, “টেলিফোনে জেলা সভাপতি জানালেন, ‘আপনাকে বরখাস্ত করা হল’। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী কারণে আমাকে বরখাস্ত করা হল? বলা হল, আমি পদে থেকে দল বিরোধী কাজ করছি।’’ জেলা তৃণমূলের ওই সূত্র জানিয়েছে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের নয়া তৃণমূল সভাপতি হচ্ছেন স্বদেশ দাস।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নন্দীগ্রামে একের পর এক ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু। বিজয়া সম্মেলনী থেকে ১০ নভেম্বরের সভা, সব জায়গাতেই নাম না-করে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। আর ওই সভাগুলি আয়োজনের মূল কারিগর ছিলেন মেঘনাদ। মেঘনাদকে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠতার জন্য খেসারত দিতে হল বলেই মনে করছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
মেঘনাদ বলেন, ‘‘শিশিরবাবুকে প্রশ্ন করেছিলাম,আমি কি কোনওদিন দলবিরোধী কাজ করেছি? আমি কি কোনওদিন বিরোধী দলের হয়ে কাজ করেছি? শুধুমাত্র শুভেন্দুর সঙ্গে সৌহার্দ্য রেখে চলেছি এটাই কি আমার অপরাধ? যে সময় শুভেন্দুর সঙ্গে মিটিং-মিছিলে গিয়েছি তখন উনি দলের নেতা, মন্ত্রী ছিলেন। তা ছাড়া কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার মানেই কি আমি দল বিরোধী? আমাকে এমন তকমা দিয়ে সরানো হচ্ছে কেন? জেলা সভাপতির কাছে কোনও জবাব পাইনি।’’ তাঁর কথায়, “আমি শিশিরবাবুকে জানিয়েছি, দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি তা মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে এটাও বলতে চাই, ১৫ বছর ধরে বামেদের বিরুদ্ধে একটানা লড়াই চালিয়েছি। বার বার বামেদের হামলার শিকার হয়েছি। বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারপরও তৃণমূলের জন্য মাটি কামড়ে থেকে লড়াই চালিয়েছি। এখন এটাই আমার পুরস্কার!”
হতাশ মেঘনাদ বলেন, “দলের প্রতি আনুগত্য আমার আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু যে বদনাম দিয়ে দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তা সত্যিই কষ্টকর। আশা করব দলের জন্য যা করেছি, ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব তা উপলব্ধি করবেন। আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত।’’
আরও পড়ুন: ‘স্তাবকতা করলেই নম্বর বাড়ে, তাই আমার নম্বর কম’, মন্ত্রী রাজীব উবাচ
মেঘনাদ ছাড়াও কয়েকজন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ ব্লক সভাপতিকে শনিবার সরানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভগবানপুর-২ ব্লক সভাপতি মানব পড়ুয়া। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, তাঁর পরিবর্তে দলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শশাঙ্কশেখর জানাকে। মানবকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি শিশিরেরও। তবে রদবদলের বিষয়ে রামনগরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অখিল গিরি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম-১ এর ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পালকে দলে থেকে দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ভগবানপুর-২ ব্লকের সভাপতি পদে থেকেও নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়ক খুনের মামলায় মুকুল রায়কে চার্জশিট সিআইডি-র
এ ছাড়া কাঁথি-১ ব্লক সভাপতি মৃন্ময় পন্ডা এবং কাঁথি-২ ব্লক সভাপতি উত্তম বারিককেও দলীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর মিলেছে জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রে। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নন্দকুমার ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুকুমার বেরাকে অপসারণ করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। যদিও এ দিন সুকুমার বলেন, ‘‘দলীয় নেতৃত্বের তরফে লিখিত কোনও বার্তা পাইনি। আমি শুভেন্দুর সঙ্গেই ছিলাম। তাঁর সঙ্গেই থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy