বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর ডাক পেয়ে কেন তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন, রবিবার আরও এক বার সেই ব্যাখ্যা দিলেন বিরোধী দলনেতা। একই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর মুখে ফের শোনা গেল, ‘‘ডিসেম্বরে বড় চোর ধরা পড়বে।’’ তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা এ দিন শুভেন্দুর বিধানসভা নন্দীগ্রাম থেকেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন।
শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দুদের ওই সাক্ষাতের পরে নানা চর্চা হচ্ছে। শাসক তৃণমূল ও বিরোধী দুই শিবির থেকেই একে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হয়েছে। তবে শুভেন্দু ও অন্য বিজেপি নেতারা যে ভাবে প্রতিদিন বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক’ করে তুলছেন, তাতে পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁরা অবস্থান ‘পরিষ্কার’ করতে মরিয়া।
এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়ার সভাতেও শুভেন্দু জানান, বিধানসভায় সাক্ষাৎ নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ ছিল। শুভেন্দুর দাবি, ‘‘বিধানসভার চেয়ারে বসে আছি। মার্শাল এসে বললেন, ‘আপনি বিরোধী দলনেতা। আপনার সঙ্গে ‘লিডার অফ দ্য হাউস’ দেখা করতে চান, কথা বলতে চান।’ আমি বুঝলাম, এ তো ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আমাকে চা খাওয়ার নামে একা নিয়ে যাচ্ছেন। তারপর আমার বিজেপি কর্মী, যাঁরা আমাকে কিংবা আমাদের দেখে আশায় বুক বাঁধছেন, ভাববেন সেটিং হয়ে গিয়েছে। তখন বললাম, শর্ত আছে।’’
এরপরই একাধিক বিজেপি বিধায়ককে সঙ্গে নিতে চান তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা হয় মিনিট দুয়েক। নমস্কার-প্রতি নমস্কার। আমরা এক কাপ চা-ও খাইনি। আমরা বিজেপি করি। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। রাজনীতির সৌজন্য আমি জানি। নরেন্দ্র মোদী আমাদের সেটা শিখিয়েছেন।’’ এদিন ওই প্রসঙ্গ টেনে বোলপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো। উনি বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাই বিরোধী দলনেতাকে চা খাওয়াতে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন।’’
রবিবার নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া মোড়ে তৃণমূলের পথসভায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন একসময় বিজেপিতে চলে যাওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল, অস্বীকার করব না। তবে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝেন না। বিরোধী দলনেতা যে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেন, ভাবতে খারাপ লাগে এক সময় আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। যেখান থেকে আমাদের উত্থান, সেই মাকে ভুলতে পারি না। কিন্তু এ কি কুলাঙ্গার দেখছি আমি!’’
‘ডিসেম্বরে রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ চোর ধরা পড়বে’ দাবি করে এ দিন ফের শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘রাজ্যের সবচেয়ে বড় চোর যে কয়লা চুরি, গরু পাচার, বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তাকেই ডিসেম্বরে জেলে যেতে হবে।’’ এ প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেতা রাজীবের বক্তব্য, ‘‘ডিসেম্বরে শুধু হবে হবে বলছেন। ঠিক কী হবে সেটা স্পষ্ট করে কেন বলছেন না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘কার ধরা পড়ার কথা হচ্ছে, জানি না। কিন্তু অনেক আগে চিট ফান্ডের সময়েই তো ধরা পড়া উচিত ছিল! নারদ-কাণ্ডে যাকে টাকা নিতে দেখা গেল, তাকে প্রশ্রয়ই বা কেন দেওয়া হল? মোদ্দা কথা হল, কানের পাশে ঘুরঘুর না করে মাথাটা ধরতে হবে। মাথা বাঁচানোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রী কি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে ধরেছেন আর সেই জন্যই এখানে বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে চা খেতে যাচ্ছেন?’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উত্তর কোরিয়ার ‘স্বৈরাচারী’ প্রেসিডেন্ট কিমের সঙ্গে তুলনা করার পাশাপাশি শুভেন্দু এ দিন পুলিশকেও নিশানা করেছেন। শুভেন্দু জানান, তাঁর বিরুদ্ধে ৩৪টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সব ২০২১ সালের ৫ মে-র পরে। সেই মামলার তালিকা দিয়ে পুস্তিকা বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিতে প্রকাশিত হবে। তা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও তিনি পাঠাবেন। তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুণাল পাল্টা বলছেন, ‘‘আমাদের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা শুভেন্দু কে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। শুভেন্দু কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া, ঝাড়গ্রাম ঢুকে দেখাক।’’ শুভেন্দুর সভা শেষে এ দিন পুলিশকে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে গোলমালও হয়। ঘটনায় এক বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে ভূপতিনগর থানার পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy