—ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে রাজ্যের পরিবহণ, সেচ এবং জনসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে পদত্যাগ করলেন তিনি। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘রাজ্যের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ’। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও ইমেলে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি শুভেন্দু।
শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী তা রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শুভেন্দুর হাতে যে ৩টি দফতর ছিল (পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন) সেগুলি আপাতত মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রাখবেন।
শুভেন্দুর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আজ দুপুর ১টা বেজে ৫ মিনিটে শুভেন্দু অধিকারীর দফতর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা পদত্যাগ পত্র আমাকে ফরোয়ার্ড করা হয়। সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি দেখা হবে’।
শনিবার শুভেন্দু দিল্লি যাচ্ছেন বলে শুরুতে শোনা গিয়েছিল। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এখনই দিল্লি যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই শুভেন্দুর। তাই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরাল হচ্ছে। তবে এখনও তৃণমূল ছাড়েননি তিনি। এ নিয়ে তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় বলেন, ‘‘এখনও বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি উনি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেননি। যত ক্ষণ বিধায়ক আছেন, তত ক্ষণ দলের সদস্য উনি। মন্ত্রিত্ব ছাড়া একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ওঁর। আমি এতে দুঃখিত। ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, দল ছাড়বেন না। আমি এখনও আশাবাদী। যত ক্ষণ দলে আছেন, আমি আশা করব এবং চেষ্টা চালিয়ে যাব ওঁকে দলে রাখার।’’
Today at 1:05 pm a resignation letter of Mr. Suvendu Adhikari from office as minister addressed to Hon’ble Chief Minister has been forwarded to me.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 27, 2020
The issue will be addressed from constitutional perspective. pic.twitter.com/cxjF68uomH
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে মিহির গোস্বামী? নিশিথের সঙ্গে পৌঁছলেন দিল্লিতে
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুভেন্দুকে বিজেপিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম তৃণমূলের মুষলপর্ব শুরু হয়েছে। এটা শেষের শুরু হল। এর পর দলটাই উঠে যাবে। শুধু শুভেন্দু নন, বাংলায় পরিবর্তনের জন্য যাঁরা আসবেন, তাঁদের সকলকে বিজেপিতে স্বাগত।’’ বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘শুধু রাজ্যবাসীই নন, তৃণমূলের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন দলের নেতারাও।’’ শুভেন্দুর পদত্যাগ তৃণমূলের পক্ষে অশনি সঙ্কেত বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও।
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেখানকার বিধায়কও তিনি। তৃণমূলে তাঁর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা আগামী দিনে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা আলোচনার পর জানানো হবে। তবে রাজ্যে যেমন মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই, তেমনই শুভেন্দু অধিকারীরও বিকল্প নেই।’’
যদিও শুভেন্দুর সিদ্ধান্ত ভাল ভাবে নেননি নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের আর এক নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘‘উনি মানুষের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থের কথা ভেবেছেন। উনি দল ছাড়ছেন, মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন এতে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। তবে এই সিদ্ধান্তে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে অপমান করলেন।’’
শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগপত্র।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত বিরোধী দলনেতা মান্নানের খোঁজ নিতে ফোন মমতার
তবে শুভেন্দুর প্রতি দলের আচরণেও ক্ষুব্ধ তৃণমূলের অনেকেই। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের সম্পাদক কনিষ্ক পন্ডা বলেন, ‘‘মেঘনাদ যখন যুদ্ধ করছিলেন, তখন সবাই তাঁকে ব্যবহার করে। শুভেন্দুকে যে আঘাত করা হল, তাতে পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে আঘাত করা হয়েছে। এই জেলার মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছি আমরা। প্রতিনিয়ত শুভেন্দুকে যেভাবে আঘাত করা হচ্ছে, তার যোগ্য জবাব দেবে জেলার মানুষ। লড়াইয়ের জন্য কোনও নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই শুভেন্দুর। নিরাপত্তা ছাড়াই লড়াই করতে পারবেন উনি।’’
শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ এবং সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচিত তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভাগুলির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আনন্দময় অধিকারী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। তার পর রাতারাতি সেই জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, যাঁর সঙ্গে শুভেন্দুর মতভেদের কথা কারও কাছেই চাপা ছিল না। তাতেই শুভেন্দু পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বলে জানা গিয়েছে।
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, দলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে বেশ কিছু দিন ধরেই কাছের লোকজনের কাছে আক্ষেপ করছিলেন শুভেন্দু। ভবিষ্যতে দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবেন না বলে তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পদত্যাগপত্র পাওয়ার আগে এ দিন সকালে রাজ্য সরকারের দেওয়া জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও ছাড়েন শুভেন্দু অধিকারী। নিজের পাইলট কার এবং এসকর্টও ছেড়ে দেন। তার কিছু ক্ষণ পরেই পদত্যাগপত্র পাঠান মুখ্যমন্ত্রীকে।
অন্য দিকে, দলবদলের জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়ে এ দিন সকালে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে দিল্লি যাচ্ছেন কোচবিহারের দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy