বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ‘তারিখ রাজনীতি’র দায় নিজের ঘাড়ে নিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হুগলির ব্যান্ডেলে শুক্রবার রাজ্য বিজেপির কার্যকরী বৈঠকে তিনি জানান, এই সংক্রান্ত বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত।
রাজ্যের শাসক দলকে হুঁশিয়ারি দিতে ডিসেম্বরে ‘ঘটনা’ ঘটার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল বিজেপি নেতাদের গলায়। এক ধাপ এগিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে। সেই সঙ্গে ১২, ১৪, ২১ ডিসেম্বরের তিনটি দিন উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেও রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির পক্ষে ‘লাভজনক’ কিছু না ঘটায় বিরক্ত হয়েছিলেন রাজ্যে তাঁর সতীর্থেরা। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবারই বলেছিলেন, “তারিখ পে তারিখ! আমি কোনও তারিখের রাজনীতি করি না। কারণ, আমার মতে শুধু ভোটটাই তারিখ মিলিয়ে হয়।” তারও কয়েক দিন আগে হাজরার সভা থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “শুভেন্দুদা তারিখ বলেছেন। আমি ওঁর মতো কোনও দিন বলতে চাই না।”
এর মধ্যেই ১২ ডিসেম্বর সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু ও ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা বেরিয়ে আসার পরে পদপিষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূলও বিরোধী দলনেতার ‘তারিখ-রাজনীতি’কে নিশানা করছিল। শেষ পর্যন্ত ঘরে-বাইরে চাপের মুখে বক্তব্যের দায় নিজের ঘাড়ে নিলেন শুভেন্দু। তবে নিজের অবস্থান থেকে সরেনননি তিনি। ব্যান্ডেলে বিজেপির রাজ্য কার্যকরী বৈঠকে এ দিন শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া তিনি দিয়েছেন। যা বলেছেন, সেটা তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মতামত’। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। যা তিনি বলেছেন, তা হবেই। সোমবার না হলে বুধবার হবে। কিন্তু হবেই। এই নিয়ে কারও মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি রাখার প্রয়োজন নেই।
বাঁকুড়ার ওন্দার জনসভাতেও এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলেছিলাম, চোরেদের, ধেড়ে ইঁদুরদের, ডাকাতদের আমরা জেলে ঢোকাতে পারব। ডিসেম্বর না হোক, জানুয়ারিতে হবে। জেলে ঢুকতেই হবে ডাকাতদের!”
দলের বৈঠকে নিচু তলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী বাহিনী না থাকার কথাও উঠে আসে শুভেন্দুর কথায়। তিনি জানান, মিটিং-মিছিলে লোক হচ্ছে। কিন্তু বুথে সেই লোক পাওয়া যাচ্ছে না। উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানিয়েছেন, উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু এখন হাজার দুয়েক কর্মীও নেই। এই পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। এখন থেকে পাটিগণিত করে না এগোলে লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেতে হবে। তিনি আসন্ন লোকসভায় ২৫টি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করে দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে বিরোধী দলনেতার পরামর্শ, নির্বাচনের আগে দিনে ১০টা করে পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরতে হবে। গ্রামে গিয়ে কর্মীদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে নেতাদের। তবে গ্রামের মানুষ আশ্বস্ত হবেন। বিজেপির পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হবে।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সংগঠন বি এল সন্তোষ, ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল-সহ প্রায় সব শীর্ষ নেতা এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শীর্ষ নেতৃত্ব দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব থামাতে কড়া বার্তা দিয়েছেন। সন্তোষ জানান, ঐক্য আর সমন্বয় শুধু নিচের তলায় নয়, উপরেও দরকার। অযথা এমন মন্তব্য থেকে নেতাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে, যা বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে। সকলকে একত্রে কাজ করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। সুকান্তও জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাধা আসবেই। ভাল ফল করতে হলে সেই বাধা রুখেই এগোতে হবে।
পাশাপাশিই দলের সংগঠন নিয়ে সন্তোষের বার্তা, পুরনোদের সম্মান করা বিজেপির সংস্কৃতি। সব বুথ সভাপতি নতুন হবেন কেন? পুরোনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। গতানুগতিক বৈঠক না করে, সংগঠন বাড়াতে নতুন ভাবনা আনতে হবে। প্রয়োজনে স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়দের ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, গত বার কোনও সংগঠন ছাড়াই যদি লোকসভায় ভাল ফল হয়, এখন সাংগঠনিক ভাবে দল বেড়েছে। তা হলে ভাল ফল হবে না কেন? তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন সংগঠনই কথা বলে। তাঁদের সেই কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধ মেটানোর বার্তা পাওয়ার পর অবশ্য এ দিন মঞ্চে পাশাপাশিই বসতে দেখা যায় শুভেন্দু ও দিলীপকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy