চার তৃণমূল নেতার সম্পত্তির নথি প্রকাশ্যে আনলেন শুভেন্দু অধিকারী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূলের চার নেতার সম্পত্তির ‘নথি’ তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করে সে সব প্রকাশ্যে আনলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করেন, তাঁর হাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চার নেতার সম্পত্তির নথি রয়েছে। তার পরেই সেই সব ‘নথি’ প্রকাশ্যে আনেন শুভেন্দু। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন ওই সব নথির সত্যতা যাচাই করেনি। তৃণমূল যদিও দলীয় ভাবে জবাব না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাই জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, জবাব তাঁরাই দেবেন।
শুধু নথিই নয়, পরবর্তী কালে প্রমাণ হিসাবে বেশ কিছু ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তাঁর দলের ৯৯.৯৯ কর্মী শতাংশ সৎ। কিন্তু আমরা প্রমাণ করে দেব এই দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ লোকই অসৎ। একটা জেলা দিয়ে শুরু হল। এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র।” শুভেন্দুর সংযোজন, “এ তো সবে সূচনা। ধাপে ধাপে সব প্রকাশ্যে আনব।” শুভেন্দু জানিয়েছেন, আগামী শনিবার কলকাতায় ইডি দফতরে গিয়ে তিনি এই চারজনের সম্পত্তির যে নথি রয়েছে তা জমা দিয়ে আসবেন।
শুভেন্দু বৃহস্পতিবার নিজের বক্তব্যের শুরুতেই উল্লেখ করেন কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডলের কথা। তাঁর দাবি, এই তৃণমূল বিধায়কের মোট দলিলের সংখ্যা ৩৯টি। তার মধ্যে গণেশের নিজের নামে রয়েছে ১৩টি। স্ত্রী মৌসুমীর নামে সম্পত্তি রয়েছে ১৬টি। মেয়ে রোশনী এবং ঋত্বিকার নামে ৪টি করে, শিবপদ মণ্ডল (বাবা) ১, মৌরীবালা মণ্ডলের নামে একটি। ২০১৯-’২১ সালের মধ্যে এই সম্পত্তি কিনেছেন গণেশ। যার দাম কয়েক কোটি। শুভেন্দুর কথায়, “একশো দিনের কাজে সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে কুলতলিতে।”
এর পরেই শুভেন্দু দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জহাঙ্গির খানের নাম উল্লেখ করেন। তিনি পঞ্চায়েত সমিতির ভারপ্রাপ্ত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষও বটে। বিরোধী দলনেতা বলেন, “ইনি তোলাবাজ ভাইপোর সবচেয়ে বড় এজেন্ট। ওঁকে মিস্টার ১৫ পার্সেন্টও বলা হয়। জহাঙ্গিরের দলিলের সংখ্যা ৩৯টি। নিজের নামে ছ’টি, স্ত্রী শারিকা বিবির নামে ৩১, সুলতানা বিবি খাঁর(শ্যালিকা) নামে দু’টি সম্পত্তি রয়েছে।”
শুভেন্দুর তালিকায় তিন নম্বরে ছিল ডায়মন্ড হারবার-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম অধিকারীর নাম। তাঁরা গৌতমের ১১টি সম্পত্তির হদিস পেয়েছেন বলে দাবি শুভেন্দুর। তাঁর কথায়, “২০১৯-’২১ সালের মধ্যে কেনা হয়েছে ওই সম্পত্তি। গৌতমের নিজের নামে রয়েছে ছ’টি সম্পত্তি, উমা অধিকারী (স্ত্রী) নামে তিনটি, মেয়ে তৃষা এবং সীতা অধিকারী নামে দু’টি।”
তালিকায় চতুর্থ নাম ছিল শামিম মাহাবেদ মোল্লার। তিনি ডায়মন্ড হারবার ২ নম্বর ব্লকের একটি অঞ্চলের সভাপতি। তাঁর নামে ১০টি সম্পত্তি আছে বলে শুভেন্দু দাবি করেন। যে চার জনের সম্পত্তির কথা শুভেন্দু উল্লেখ করেন, তাঁদের সম্পদের মোট পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। শুভেন্দুর কথায়, “এই সব সম্পত্তি মেলালে তার মূল্য দাঁড়াবে ৫০ কোটি টাকারও বেশি।”
বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি, সবে চার জন নেতার নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ১০০ তৃণমূল বিধায়ক, পঞ্চায়েত এবং ব্লক সভাপতির তথ্য হাতে আছে। সেগুলি ধাপে ধাপে পরে প্রকাশ্যে আনবেন তিনি। এর পরই শুভেন্দুর মন্তব্য, “২০১৮-’২১ সাল পর্যন্ত যে বেপরোয়া সম্পদ, অর্থ, এবং এঁদের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন ঘটেছে তা প্রকাশ্যে আনা হবে। আমাকে যতই আক্রমণ করা হোক না কেন বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতাকে দমাতে পারবে না। এটা শিলান্যাস বলতে পারেন। প্রাক্পূজা। আবার আগামী সপ্তাহে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আনব।” কার্যালয়ে বসে একাধিক বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতির টাকা নেওয়ার দৃশ্যও তাঁর কাছে আছে বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু।
তৃণমূল যদিও দলীয় ভাবে শুভেন্দুর এই সব দাবির প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। দলের মুখ্যপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই সংক্রান্ত অভিযোগে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁরাই জবাব দেবেন। তবে আসলে নারী-পুরুষ বিতর্ক থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই সব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে আনছেন উনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy