শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
বেশ কিছু দিন ধরেই নজরে পড়ছিল ছাড়া ছাড়া ভাব। তৃণমূলের কর্মসূচিতে সে ভাবে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। তবে সমবায় ব্যাঙ্ক হোক বা ক্লাবের অনুষ্ঠান, মঞ্চে হাজির থাকছিলেন তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সেই দাপুটে নেতা তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যেই দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের কর্মসূচিতে। পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থানে হাজির থাকছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
অথচ রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দুই জনসংযোগ কর্মসূচি ‘দিদিকে বলো’ এবং ‘বাংলার গর্ব মমতা’ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হলেও শুভেন্দু তাতে নিজে যোগ দেননি। তা নিয়ে দলের অন্দরে কম প্রশ্ন ওঠেনি। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি ও আমপানে বিস্তর ক্ষতির পরে শুভেন্দু নিজের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলীয় মঞ্চে দেখা যায়নি তাঁকে। গত ৩০ জুন লালগড়ে একটি ক্লাবের ‘হুল দিবসে’ অনুষ্ঠানে গেলেও ঝাড়গ্রামে রাজ্যস্তরের সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি তাঁকে। অথচ ওই অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে শুভেন্দুর নাম ছিল।
শুভেন্দু অনুগামীদের একাংশের ব্যাখ্যা, লোকসভায় ধাক্কার পরে ঘুরে দাঁড়াতে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরাকে সহজে মানতে পারেননি ‘দাদা’। সে জন্যই পিকে-র পরামর্শ মতো কর্মসূচি রূপায়ণে বিরত থেকেছেন তিনি। জেলায় নিজের মতো করেই জনসংযোগের রাস্তা তৈরি করেছেন।
সম্প্রতি পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, রেলের বেসরকারিকরণ প্রভৃতি নিয়ে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ফের শুভেন্দুকে দেখা যাওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ স্বস্তি পেলেও অনেকের প্রশ্ন, দূরত্ব নেই বোঝাতেই কি ‘হাজিরা’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও মত, সময়ের সঙ্গে হয়তো রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টেছে। তাই দিদির ঘোষিত কর্মসূচি পালনে ফের সামনের সারিতে এসে শুভেন্দু বার্তা দিতে চাইছেন, দলের প্রতি তাঁর আনুগত্যে কোনও চিড় ধরেনি। একই ব্যাখ্যা বিরোধীদের।
জেলা রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের ‘বিরোধী শিবিরের’ নেতা বলে পরিচিত জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি বলেন, ‘‘আমাদের দলের একজন নেত্রী। তাঁর নির্দেশ কে মানছেন বা মানছেন না দল তা নজর রাখছে। তবে দলের কর্মসূচিতে কেউ অংশ নেবেন কিনা এটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।’’ খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েকের কথায়, ‘‘আমপান ক্ষতিপূরণ নিয়ে নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ যে ভাবে প্রতিবাদ করছেন তাতে এলাকার বিধায়ক শুভেন্দু দায় এড়াতে পারেন না। উনি তৃণমূলেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাই এখন দলনেত্রীর প্রতি আনুগত্য দেখাতে দলের কর্মসূচিতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন।’’
এ সব ব্যাখ্যায় অবশ্য আমল দিচ্ছেন না জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী বরাবরই দলের বিশ্বস্ত কর্মী ও নেতা। উনি দলনেত্রীর প্রতি অনুগত ও দায়বদ্ধ। আমাদের ও বিরোধীদলের কিছু দুর্বল লোকজন তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’’
এ দিকে, দলের কর্মসূচিতে পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, রেলের বেসরকারিকরণ নিয়ে তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে হলদিয়ার শহর তৃণমূল সভানেত্রী মধুরিমা মণ্ডলকে। তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে দলে। দলের একাংশের অনুযোগ, মধুরিমা থাকেন কাঁথিতে। সাংগঠনিক কোনও সমস্যায় তাঁকে পাওয়া যায় না। তাই হয়তো কর্মসূচিতেও তিনি নেই। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে মধুরিমার দাবি, ‘‘আমি হলদিয়ায় প্রায়ই যাই। তবে কর্মসূচির পুরোভাগে থাকতে পারছিনা শারীরিক অসুস্থতার কারণে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy