শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
নাম না করে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতাদের কুকুর বললেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখানে এখনও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কিছু কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। ওদের আমি পরিষ্কার করে দেব। পরের বছর আর ওরা থাকবে না।’’
শুক্রবার, ৭ জানুয়ারি, নন্দীগ্রামের জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়াতে এসেছিলেন শুভেন্দু। অভিযোগ, সোনাচূড়াতে ঢোকার মুখে তাঁকে লক্ষ্য করে তৃণমূলের কিছু কর্মী কটুক্তি করেন। যদিও শুভেন্দুর মন্তব্যের কারণ সেই ঘটনা কি না, তা স্পষ্ট নয়। শহিদ দিবসের মঞ্চে সেই ঘটনার উল্লেখও করেননি তিনি। কেবল বলেছেন, ‘‘পরিষ্কার কী ভাবে করতে হয় তা আমার জানা আছে। ৮০ ভাগ পরিষ্কার করেও দিয়েছি। এক বছরে সব সাফ করে দেব।’’
বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে নন্দীগ্রাম থেকে জিতেছেন শুভেন্দু। তিনি এখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। বিধানসভার প্রধান বিরোধী নেতাও। তবে এখনও নন্দীগ্রামে এলে তাকে মাঝে মধ্যেই স্থানীয়দের বিরূপ আচরণের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। যেমন শুক্রবারও হয়েছে। যদিও শহিদ দিবসের মঞ্চে শুভেন্দু নিজে কোনও অভিযোগ করেননি। বরং নন্দীগ্রামকে তিনি কী ভাবে ‘পরিষ্কার’ করবেন, সে কথা খোলসা করে বুঝিয়েছেন। নাম না করে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা এবং বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট সেখ সুফিয়ানের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেছেন, ‘‘জাহাজবাড়ির মালিককে দেখুন। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা এখন ভোকাট্টা।’’ বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই সুফিয়ানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আাপাতত হাই কোর্ট পার করে এখন সুপ্রিম কোর্টে দৌড়চ্ছে। এরপর আর কোথায় কোথায় দৌড় করাই দেখুন।’’ তৃণমূল অবশ্য বলছে, এক কালে যে নেতাদের ঘাড়ে পা রেখে শুভেন্দুর রাজনীতিতে উত্থান, এখন তাঁদেরই প্রকাশ্য মঞ্চে অপদস্থ করে আসলে নিজের আসল রূপটাই দেখাচ্ছেন বিজেপি নেতা।
শুক্রবার শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তৃণমূলও। সোনাচূড়ার ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে যেখানে ৭ জানুয়ারি গুলিতে তিন জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনকারী শহিদ হয়েছিলেন সেখানেই শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল। উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা তৃণমূলের আবু তাহের। শুভেন্দুর মন্তব্য প্রসঙ্গে তাহের বলেন, ‘‘শুভেন্দু যেদিন থেকে তৃণমূল ছেড়েছেন, তারপর থেকে যে ওঁর ভাষাও খারাপ হয়েছে, তা সবাই দেখেছে। নন্দীগ্রামের মানুষকে উনি কুকুর বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকেও কুৎসিত ভাষায় গালাগালি দেন।’’
শুক্রবারের সভায় তৃণমূলের কটুক্তি নিয়ে মন্তব্য না করলেও পুরনো স্মৃতিচারণ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারির কথা। তার কিছুদিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র। শহিদ দিবসে শহিদ বেদীতে মালা দিতে আগের দিন গভীর রাতে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সোনাচূড়ায় সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘২০২১ সালে যত গুন্ডা, হাতকাটা, আঙুল কাটা, গড়চক্রবেড়িয়া থেকে আনা অসামাজিক লোককে জড়ো করে আমাকে বাধা দেওয়া হল। আমি বাধ্য হয়েছিলাম আগের রাতে এসে শহিদ বেদীতে মালা দিতে। কিন্তু মাত্র একবছরের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখুক এই কানকাটা পার্টির পঞ্চায়েতের চুরির টাকায় বড়লোকি দেখানো, সাধারণ মানুষের টাকা লুট করে নেওয়া চোরগুলো। যাদের পেটে ধাক্কা দিলে আমার দেওয়া ভাত বেরবে, যারা একবছর আগে আমাকে বাধ্য করেছিল রাতে আসতে তারা এখন সব গায়েব।’’
নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতাদের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সিবিআই অলরেডি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় চার্জশিট দিয়েছে ১১ জনের নামে, বাকিগুলোকেও তুলব। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ফিরে আসার পর দেখবেন এরা সব পালাবে।’’ শুভেন্দুর এই বক্তব্য প্রসঙ্গেই তৃণমূল নেতা তাহের বলেন, ‘‘একসময় আমরা হিটলারের গল্প শুনেছি। ওরা বলত সব জয় করে নেব। শুভেন্দুও স্বপ্ন দেখছেন কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ভরে সব দখল করে নেবেন। একসময়ে যাঁদের ভরসায় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এখন তাঁদেরই অপদস্থ করছেন। কিন্তু মানুষ সব দেখছে। উনি এর ফল পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy