Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Suvendu Adhikari

১৫ জন বিধায়ক নিয়ে মৃত পড়ুয়ার বাড়ি যাবেন শুভেন্দু, মঙ্গলে বিধানসভায় হিসাব বুঝে নেওয়ার হুমকি ব্রাত্যকে!

বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ‘চেপে ধরার’ হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী, আপনি পালিয়ে যাবেন না!’’

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী এবং ব্রাত্য বসু।

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী এবং ব্রাত্য বসু। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ১৮:৩৮
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় এ বার সুর চড়ালেন শুভেন্দু অধিকারী। মৃত পড়ুয়ার নদিয়ার বাড়িতে ১৫ জন বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিজেপির যুবমোর্চার সভামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেও বিঁধেছেন শুভেন্দু। নিশানা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ‘চেপে ধরার’ হুঁশিয়ারি দিয়ে বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, ‘‘বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে হিসাব বুঝে নেব। শিক্ষামন্ত্রী, আপনি পালিয়ে যাবেন না!’’

শুভেন্দুর মন্তব্যের পাল্টা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘পালানোর স্বভাব তৃণমূলের নেই। পালানোর স্বভাব রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সাড়ে তিন মাস ধরে মণিপুর জ্বলার পরেও উনি পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন। অনাস্থা প্রস্তাব ডেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে নিয়ে আসতে হয়েছে।’’

যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। পুলিশের কাছে এই অভিযোগ তুলেছে মৃত পডুয়ার পরিবার। বুধবার মৃতের নদিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থ দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁদের কাছেও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে। পরে ব্রাত্য জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন। দোষীরা কেউ ছাড় পাবেন না। এ বার বিজেপির পক্ষ থেকেও মৃত পড়ুয়ার বাড়িতে যাওয়ার কথা জানালেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ১৫-২০ জন বিধায়ককে মৃতের বাড়িতে যাবেন তিনি। দেখা করবেন পড়ুয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মৃত পড়ুয়ার বাবা অনুমতি দিলে আইনি পথে পড়ব। আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেব।’’

পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় সরকারের তরফে ঠিক মতো পদক্ষেপ করা না হলে বিধানসভা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। কয়েক দিন মুলতুবি থাকার পরে বিধানসভার বাদল অধিবেশনের পরবর্তী পর্যায় শুরু হওয়ার কথা ২২ অগস্ট অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার। তার আগে গত বুধবার কলকাতার আইসিসিআরে একটি অরাজনৈতিক সংস্থা আয়োজিত আলোচনাসভায় হাজির হয়ে শুভেন্দু হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, বিজেপি বিধায়কেরা কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছেন! এ বার সরাসরি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা বললেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, আপনি কান খুলে শুনে রাখুন। মঙ্গলবার বিধানসভা খুলছে। ওই দিন আপনি থাকবেন। সভা ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না। জবাব দেবেন, কেন এই ঘটনা ঘটল? কেন সিসিটিভি নেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে? এ সবের উত্তর আপনাকে দিতে হবে।’’

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল বিজেপির যুবমোর্চা। সেখানেই ভাষণ দেন শুভেন্দু। বক্তৃতা করার সময় মৃত পড়ুয়ার নাম নিতে গিয়ে থমকে যেতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতাকে। এর পরেই তিনি জানান, মন্ত্রী চন্দ্রিমা অনুরোধ করেছিলেন যাতে, মৃত পড়ুয়ার নাম এবং ছবি কিছুই ব্যবহার না করা হয়। এই অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে শুভেন্দু নিজের মোবা‌ইলে থাকা একটি ভিডিয়ো ফুটেজ দেখান। সেই ফুটেজে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে মৃত পড়ুয়ার নাম নিতে শোনা গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘উনি নাম নিতে পারেন, কিন্তু আমরা পারি না।’’ মৃত পড়ুয়ার নাম নেওয়ার জন্য ব্রাত্যকে যাতে নোটিস ধরানো হয়, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়ের কাছে সেই দাবিও জানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সুদেষ্ণা যদি কালকের মধ্যে নোটিস না করেন, তা হলে কাল থেকে সবাই নাম বলব, ছবি বুকে নিয়ে ঘুরব। যা পারেন করবেন।’’

শুভেন্দুর অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন-চারটি সংগঠন মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘বি-টিম’ হয়ে কাজ করছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘পুলিশের উপর ভরসা নেই। যাদবপুরে ৩-৪টি সংগঠন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বি-টিম। নো ভোট টু বিজেপির হয়ে তারা প্রচার করেছিল। যাদবপুর থেকে ব্লিচিং ফিনাইল দিয়ে এদের পরিষ্কার করতে হবে। যাদবপুর থেকে উপড়ে ফেলতে হবে এদের।’’

পাল্টা শান্তনুর জবাব, ‘‘যাদবপুরে যারা সিসিটিভি লাগাতে দেয়নি, তারা যে বাম এবং অতিবাম, এটা বাচ্চারাও জানে। শুভেন্দুবাবু যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বি-টিম বলেছেন, তাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশই গ্রেফতার করেছে। যদি শুভেন্দুবাবুর কথা সত্যিও হয়, তা হলে এটাই প্রমাণ হয় যে, বাংলায় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE