ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের খোঁজ মিলছে না! প্রতীকী ছবি।
এক নাবালিকাকে একাধিক বার ধর্ষণে অভিযুক্ত সে। অথচ প্রভাবশালী পরিবারের সেই যুবককে ধরেও কব্জা করতে পারল না পুলিশ। রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল তার টিঁকিও ছুঁতে পারছে না! শিলিগুড়ির একটি নামী বেসরকারি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় অবশেষে হস্তক্ষেপ করতে হল সুপ্রিম কোর্টকে।
নির্যাতিতার দিদির বয়ান অনুযায়ী, গত ২০ মার্চ তাঁর বোনের এক বান্ধবী ফোন করে ডাকে। দুপুর নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাড়ি থেকে বার হয় তাঁর বোন। প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে একটি শপিং মলে যায় সে। পরে ওই বান্ধবীর পুরুষ বন্ধুরা তাদের নিয়ে একটি পানশালায় যায়। বোনের যে বান্ধবী ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়, তার প্রেমিকের নাম সাগর ছেত্রী। অভিযোগ, সে জোর করে নির্যাতিতাকে মদ্যপান করায়। এর পর মাল্লাগুড়ির একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানেও চলে দেদার মদ্যপান। এর পর শরীর খারাপ হয়ে পড়ে নির্যাতিতার। প্রেমিকাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে সাগর। কিন্তু তার বান্ধবীকে হোটেলের ঘরে আটকে পৈশাচিক অত্যাচার করে বলে অভিযোগ। তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন অভিযুক্ত সাগর তাঁর বোনকে গাড়ি করে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় বলে নির্যাতিতার দিদির অভিযোগ।
পরিবারের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলার পর, ওই দিন অর্থাৎ ২২ মার্চ শিলিগুড়ির প্রধান নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতার বাড়ির লোকজন। মেডিক্যাল টেস্টেও একাধিক বার ধর্ষণের প্রমাণ মেলে। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্ত সাগর আসলে অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা। বড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। সে নিজে শিলিগুড়ি এবং সিকিমে পারিবারিক ব্যবসার দেখভাল করে। থাকেন শিলিগুড়ির উত্তরায়ণ এলাকায়। কিন্তু ২২ মার্চের পর থেকে সে পলাতক।
পরিবারের অভিযোগ, তদন্তে নেমে পুলিশ ওই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ, পানশালার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বেশ কিছু প্রমাণ পায়। পরিচয়পত্র ছাড়াই ওই হোটেলে রাত কাটায় সাগর। তা সত্ত্বেও ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, ধর্ষণে অভিযুক্তকে ধরতে গত ৩০ মার্চ শিলিগুড়ি পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন হয়। অভিযুক্তের সন্ধান মেলে অসমের ধুবুড়ির একটি হোটেলে। সে রাতেই তাকে ধুবুড়ি সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, অভিযুক্তকে বাঁচাতে ময়দানে নামেন ধুবুড়ি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর নির্দেশেই নাকি থানা থেকে ছাড়া পেয়ে যায় ধর্ষণে অভিযুক্ত। অন্য দিকে, শিলিগুড়ি পুলিশের বিশেষ দলকে নানা আইনি জটিলতায় ফেলে তাদেরও খালি হাতে ফিরতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ।
অভিযুক্ত এর পর গৌহাটি হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করে। জামিন মঞ্জুরও হয়। সেই জামিনের নোটিস অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে বা প্রধাননগর থানায় আসেনি। সাগরের জামিনের মেয়াদ ছিল গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই মেয়াদ শেষ হতেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে নির্যাতিতার পরিবার। মামলায় অন্যতম ‘পার্টি’ করা হয়েছে রাজ্যকে। প্রথম শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, গৌহাটি হাই কোর্ট ‘ট্রানজিট’ জামিনের অপব্যবহার করেছে।
গৌহাটি হাই কোর্ট অভিযুক্তকে ২৫ এপ্রিলের পর শিলিগুড়ি আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সাগরের আর পাত্তা মেলেনি। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের দ্বিতীয় কোনও জামিনের আবেদন কোথাও গৃহীত হবে না। কিন্তু অভিযুক্ত এখন কোথায়, তার কোনও তথ্য মেলেনি।
বিচারাধীন বিষয় বলে পুলিশও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy