—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর কাণ্ডের পরে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত অগস্টে শীর্ষ আদালত ওই নির্দেশ দিলেও, দেখা যাচ্ছে কার্যত ওই একই বিষয়ে গত জুন মাসে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। যদিও সে কথা শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়নি বলেই অভিযোগ।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কার্যত ওই একই বিষয়ে ১১ সদস্যের নবগঠিত টাস্ক ফোর্সও তো রিপোর্ট দেবে। তা হলে কি একই বিষয়ে একের পর এক টাস্ক ফোর্স আর রিপোর্টের পাহাড় জমে উঠবে? বাস্তবে তার রূপায়ণ হবে না আর হাসপাতালগুলি পড়ে থাকবে সেই তিমিরে? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের মতে, “এ দেশে কমিটি তৈরি করা আর রিপোর্ট তৈরির অর্থ হল সেই বিষয়টিকে ঠান্ডা ঘরে পাঠানো। এ ক্ষেত্রেও তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অন্তত সুপ্রিম কোর্টকে জানানো উচিত ছিল, এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটি রিপোর্ট রয়েছে।”
আর জি কর কাণ্ডের পরে দেশের শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে টাস্ক ফোর্স গঠন করে যে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়, তার মূল লক্ষ্য ছিল—চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত নারী-পুরুষের উপরে হিংসার ঘটনা রোধ এবং লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা, হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। আর গত জুন মাসে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন যে রিপোর্ট জমা দেয়, তা মূলত জুনিয়র চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সার্বিক ভাবে ভাল ও নিরাপদ থাকার বিষয়ে। ফলে কার্যত প্রায় একই বিষয়ে জাতীয় টাস্ক ফোর্সকেও রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
জুন মাসের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজের উপযুক্ত পরিকাঠামো ও সুবিধে দিতে হবে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত হস্টেল, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, পরিস্রুত পানীয় জলের পাশাপাশি উচ্চ মানের খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। দেশের বিবিধ সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে বিশেষ করে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং খাওয়ার অভ্যাস বুঝে খাদ্যতালিকা তৈরি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর উপরেও বিস্তারিত ভাবে আলোচনা রয়েছে রিপোর্টে। যাতে বলা হয়েছে, সপ্তাহে কোনও ভাবেই ৭৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না জুনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের। সপ্তাহে এক দিন ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি কোনও ভাবেই চিকিৎসকদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক শুভ্রঙ্কর দত্ত অবশ্য কাজের সময় নিয়ে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের সুপারিশ মানতে রাজি নন। কিন্তু তিনিও মনে করেন, “কাজের সময় নিয়ে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। তবে আসল কথা হল, রিপোর্টের সুপারিশগুলি রূপায়ণ করা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্ক ফোর্সের বৈঠকই হয়ে চলেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়নি।”
আর জি কর হাসপাতালে নিজের বিশ্রামের জায়গায় নিহত হন নির্যাতিতা। জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের রিপোর্টে চিকিৎসকদের ফি দিন অন্তত সাত-আট ঘণ্টা বিশ্রামের সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্রামের জায়গাটি যাতে উপযুক্ত ও নিরাপদ হয়, সেই সুপারিশও করা হয়েছে। এ ছাড়া, কাজের জায়গায় যে কোনও ধরনের হয়রানি হলে তা জানানোর জন্য পক্ষপাতহীন অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা এবং অভিযোগের দ্রুত শুনানি যাতে হয়, সেই সুপারিশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে কোনও রিপোর্টের রূপায়ণ সম্ভব নয় বলেই মত পশ্চিমবঙ্গের ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধি চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর। তাঁর প্রশ্ন, “হুমকি প্রথা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা পড়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। শাসকের রাজনৈতিক মদত ও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবই মূল সমস্যা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy