Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

দুঃসহ রোদ ও জলীয় বাষ্পেই অস্বস্তি চরমে

এই বাড়তি গরমে তরতরিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এ দিন সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সিইএসসি সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ৩টেয় তাদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২,২৬২ মেগাওয়াট।

গরমে গঙ্গায় ঝাঁপ। বুধবার হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

গরমে গঙ্গায় ঝাঁপ। বুধবার হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০৫:৪৩
Share: Save:

বৈশাখের রুদ্রমূর্তি ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তার দোসর হয়েছে জলীয় বাষ্প। এই জোড়া ফলাতেই অস্বস্তি চরমে উঠেছে কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যত্র। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, বুধবার বেলা আড়াইটেয় মহানগরীতে অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৭.৬। যা চরম অস্বস্তির নিদর্শন বলেই জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

এই বাড়তি গরমে তরতরিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এ দিন সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সিইএসসি সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ৩টেয় তাদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২,২৬২ মেগাওয়াট। যা গত পাঁচ বছরের গরমের চাহিদার থেকে বেশি তো বটেই, সিইএসসি-র ইতিহাসেও তা সর্বোচ্চ। তবে এ দিন রেকর্ড চাহিদা থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি হয়নি। ওই সংস্থার এক কর্তা জানান, সাধারণত মে মাস থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। গত দু’বছর জুনের মাঝামাঝি কলকাতা এবং হাওড়ায় বিদ্যুতের সর্বাধিক চাহিদা ছিল যথাক্রমে ২১৫৯ এবং ২১৩১ মেগাওয়াট।

গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ হিসেব করে অস্বস্তির মাত্রা বা সূচক হিসেব করেন আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘সাধারণত সূচক ৫৫ পেরোলেই অস্বস্তি শুরু হয়। সূচক ৬৭-তে পৌঁছলে মারাত্মক বা চরম অস্বস্তি বলা চলে।’’ অস্বস্তির তীব্রতা এ দিন সকাল থেকেই মালুম হয়েছে পথেঘাটে। রাস্তায় বেরোলেই দরদর করে ঘাম ঝরেছে। গরমের জেরে অসুস্থ বোধ করেছেন অনেকেই। দহনে প্রলেপ দেওয়ার হাওয়াও মেলেনি।

গরম নিয়ে শুরু হয়েছে নানান রসিকতাও। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ফণীর বৃষ্টিতে ভিজব। এখন দেখছি, ঘামে ভেজাই ভবিতব্য!’’ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির মতো খাস মহানগরেও পথেঘাটে বেরোতে ওড়না বা বড় রুমালে মুখ ঢেকেছেন অনেকে। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা তো বটেই, কাজের তাগিদে পথেঘাটে বেরোনো নাগরিকেরা স্বস্তির খোঁজে মাঝেমধ্যেই চোখেমুখে জল ছিটিয়ে নিয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর দাপটে বৃষ্টি হলেও কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গে সেই স্বস্তি দীর্ঘায়িত হয়নি। বরং ফণী বিদায় নিতেই গরম আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দমদমে ৩৯.৯ ডিগ্রি। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আরও বেশি। বীরভূমের শ্রীনিকেতনে ৪০ ডিগ্রি, বাঁকুড়া ৪০.৭ ডিগ্রি। আসানসোলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, ফণীর দাপটে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে। তার ফলেই বেগ দিচ্ছে মাত্রাছাড়া আর্দ্রতা।

আমজনতার প্রশ্ন, এই গরম থেকে পরিত্রাণের বৃষ্টি মিলবে কবে? এ বার কি আর কালবৈশাখীর আশা নেই?

উপগ্রহ-চিত্র এবং রেডার-চিত্রে আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও আপাতত পরিত্রাণের আশ্বাস দিতে পারছেন না হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা। বরং গাঙ্গেয় বঙ্গের কপালে এ বার শুকনো গরম হাওয়াও জুটতে চলেছে। গণেশবাবু জানান, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি উচ্চচাপ বলয় থাকে অর্থাৎ যেখানে বায়ুর চাপ বেশি থাকে। সেই উচ্চচাপ বলয় গাঙ্গেয় বঙ্গে জলীয় বাষ্প ঢোকায়। কিন্তু ফণীর হানার পরে সেই
উচ্চচাপ বলয় আর নেই। তার বদলে ঝাড়খণ্ড-বিহারের শুকনো গরম বাতাস ঢুকছে। সেই গরম বাতাস তাপমাত্রা এবং অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sunshine Humidity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy