Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Teacher Recruitment Scam case

জেলে ফিরেই অসুস্থ ‘কালীঘাটের কাকু’, নিয়ে যাওয়া হল এসএসকেএম হাসপাতালে

স্ত্রীর মৃত্যুর পর ‘কালীঘাটের কাকু’কে প্যারোলে মুক্তি দিয়েছিল আদালত। প্যারোলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সোমবার তাঁকে সংশোধনাগারে ফিরে আনা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

Sujay Krishna Bhadra was brought to Kolkata SSKM Hospital for health condition.

‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ১৩:৪৯
Share: Save:

নিয়োগ মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সোমবারই প্যারোলের মেয়াদ শেষের পর তাঁকে সংশোধনাগারে ফেরানো হয়। কিন্তু জেলে ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ জেলে নিয়ে যাওয়া হয় সুজয়কে। কিন্তু সূত্রের খবর, জেলে ফিরেই বমি করেন তিনি। এ ছাড়া, তাঁর বুকে ব্যথার সমস্যাও রয়েছে। সংশোধনাগারের চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে সুজয়ের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন। দেখা যায়, তাঁর রক্তচাপ এবং অক্সিজেনের মাত্রায় কিছু তারতম্য হয়েছে। তার পর সাড়ে ১১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ‘কালীঘাটের কাকু’কে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত সুজয়কে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁর ইসিজি করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

সদ্য সুজয়ের স্ত্রী বাণী ভদ্রের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তবে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর কাছে থাকতে পারেননি সুজয়। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি অবস্থাতেই স্ত্রীবিয়োগের খবর পেয়েছেন তিনি। তার পর জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্ট সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। তবে সুজয়কে স্ত্রীর মৃত্যুর কারণে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য প্যারোলের মেয়াদ আরও কিছু দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে মুক্তির পাশাপাশি ‘কালীঘাটের কাকু’র জন্য বেশ কিছু শর্তও বেঁধে দিয়েছিল আদালত।

স্ত্রীবিয়োগ পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা পরে সুজয়ের প্যারোলের মেয়াদ ১৬ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সোমবার ১৭ জুলাই তাঁর প্রেসিডেন্সি জেলে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

মূলত তিনটি শর্তে ‘কালীঘাটের কাকু’র প্যারোলের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল আদালত। এক, ১৬ জুলাই পর্যন্ত তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকবেন ইডির এক জন অফিসার। দুই, পারলৌকিক ক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্দিরে বা অন্যত্র যেতে হলেও তাঁকে ১০ কিলোমিটার পরিধির মধ্যেই থাকতে হবে। তিন, ১০ কিলোমিটার পরিধির মধ্যে কোথাও যেতে হলে, সে কথা ৪৮ ঘণ্টা আগে জানিয়ে রাখতে হবে ইডিকে। তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছিল, সুজয় ওই ক’দিন তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করা পরিধির মধ্যে কোথাও গেলে, তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের কয়েক জন সদস্যও থাকতে পারবেন।

শর্ত অনুযায়ী, প্যারোলে সুজয়ের সঙ্গেই ছিলেন ইডি আধিকারিক। তাঁকে জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়েও তাঁরা ছিলেন বলে সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, ‘কালীঘাটের কাকু’কে নিয়োগ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থা। একাধিক আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তিনি জড়িত বলে দাবি।

আগে যা ঘটেছে

রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ৩০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। ২০১৮ সাল থেকে এই দুর্নীতিতে ‘কাকু’ জড়িত বলে দাবি করেছে ইডি। তদন্তকারীরা আরও দাবি করেছেন, জেরায় কুন্তল জানিয়েছেন, পার্থের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে তাঁর কাছ থেকে প্রথমে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সুজয়। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে আরও ১০ লক্ষ টাকা দেন।

শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়।

সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।

গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্টট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই ৩০ মে তলব করা হয় সুজয়কে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কাকু। এছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য নিয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রে খবর। তার আগে, গত ৪ মে সুজয়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে সুজয়ের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তিনি অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বোন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য ওই অর্থ তুলেছিলেন। পাওয়া গিয়েছিল একটি অ্যাডমিট কার্ডও। সুজয় দাবি করেছিলেন, সেটা পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর শ্যালিকার পুত্রের অ্যাডমিট কার্ড। সুজয়ের একটি ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল আর তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায় সুজয়। যদিও কুন্তল দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে আলোচনা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। সুজয় নিজে দাবি করেছিলেন, কেন তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’

গত ২৬ জুন রাত ১টা নাগাদ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুজয়কৃষ্ণের স্ত্রী বাণী ভদ্রের। নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্তের মধ্যে সুজয়ের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, ‘কাকু’র স্ত্রী অসুস্থ। স্ত্রীর দেখাশোনা করেন সুজয়। এর মধ্যে সুজয়ের জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। ফলে এর মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে দেখাও হয়নি তাঁর। মৃত্যুর পর আদালত তাঁকে প্যারোলে সাময়িক ভাবে মুক্তি দেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Kalighater Kaku Sujay Krishna Bhadra SSKM Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy