এ বার প্রকাশ্যেই চলে এল তাপস রায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দ্বৈরথ’।
দলের বিধায়ক তথা গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাপস রায়ের প্রকাশ্য আক্রমণের পর এক দিন কেটে গেলেও এখনও নীরবই রয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ওই বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কি না বা কোনও অভিযোগ জানিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। এ-ও স্পষ্ট নয় যে, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিকে কী ভাবে দেখছেন। মঙ্গলবার ওই ঘটনা ঘটার পর বুধবার সকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও অবস্থান জানাননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলের অন্দরে কোনও শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে এ ভাবে প্রকাশ্যে আক্রমণ শানাননি দলের কোনও নেতা। তা-ও তাপসের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং জনপ্রতিনিধি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সুদীপের মৌনব্রতকে অনেকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। জল্পনা শুরু হয়েছে এই মর্মে যে, এই মৌনতা তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের কথাতেই অবলম্বন করেছেন কি না। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘হয়তো সুদীপ’দা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবটা জানিয়েছেন। এখন তিনি অপেক্ষা করছেন, দল এ নিয়ে কিছু বলে কি না দেখার জন্য। আমরাও সে দিকেই তাকিয়ে আছি।’’ অন্য দিকে, তাপস-ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে সুদীপ-বিরোধী নেতা-কর্মীরা এ বিষয়ে বরাহনগরের বিধায়ককে ‘বাহবা’ দিয়েছেন। যদিও প্রকাশ্যে কেউই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের অন্দরে একটি শিবিরের আশা, বিষয়টিকে আপাতত থিতিয়ে যেতে দেওয়া হবে। পরবর্তী কালে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নেওয়া হতে পারে।
তৃণমূল বিধায়ক তাপস বুধবার সকালে জানিয়েছেন, ওই বিষয়ে এখনও দলের কোনও নেতা তাঁর সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। দলনেত্রী মমতা বা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের তরফ থেকেও তাঁর কাছে বুধবার সকাল পর্যন্ত কোনও বার্তা আসেনি।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন তমোঘ্ন ঘোষ। যিনি আগে তৃণমূলেই ছিলেন। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে সুদীপের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তাপস। তিনি ইঙ্গিত করেন, সুদীপের কথাতেই তমোঘ্নকে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘দলনেত্রীর ভাবমূর্তিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ।’’ তাপসের দাবি ছিল, তমোঘ্ন ও তাঁর পিতা তপন— উভয়েই সুদীপের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’। তাপসের প্রকাশ্য ওই বিবৃতির পরেই তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যের শাসকদলের অন্দরমহলে। কারণ, তাপস আরও বলেছিলেন, ‘‘এ বার দুর্গাপুজোয় তমোঘ্ন ঘোষের বাড়ির পুজোয় আমন্ত্রিত ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমন্ত্রিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবে। প্রত্যেকেই তমোঘ্নর বাড়িতে পুজোর সময় এক দিন গিয়েছিলেন।’’ যদিও তখন ওই নেতাদের মধ্যে কোনও বৈঠক হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস।
কিন্তু তাপসের অভিযোগের জবাবে বুধবার সকাল পর্যন্ত নীরবই রয়েছেন উত্তর কলকাতার সাংসদ এবং বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া প্রবীণ রাজনীতিক সুদীপ। মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা হলে ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও দেখে জবাব দেননি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের দুই প্রবীণ এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতার এমন ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসায় কিছুটা হলেও বিব্রত দল। তাই বুধবার এই যুদ্ধে ইতি টানতে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ৫ মে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসে অস্থায়ী তৃণমূল ভবনের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই পরস্পরের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুদীপ-তাপস। শেষমেশ ঘটনাস্থলে মমতার নির্দেশেই পরস্পরকে আক্রমণ বন্ধ করেন তারা। এ বারও কি তেমনই মমতা হস্তক্ষেপ করবেন? সে দিকেই নজর শাসকশিবিরের নেতানেত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy