Advertisement
E-Paper

‘অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না লড়াই থেকে’! লোকসভা ভোট নিয়ে তেমনই ‘ধারণা’ তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সীর

দলের অন্দরে ‘প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব’, বিশেষ করে এই টানাপড়েনে দলনেত্রী মমতা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের ভূমিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে কয়েক দিন ধরে। সেই আবহে বক্সীর এমন মন্তব্য।

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৯
Share
Save

সাম্প্রতিক কালে প্রায় প্রতি দিনই শাসক তৃণমূলের ‘অভ্যন্তরীণ বিরোধ’ প্রকাশ্যে চলে আসছিল কোনও না-কোনও ভাবে। দলের অন্দরে ‘প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব’, বিশেষ করে, এই টানাপড়েনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের ভূমিকা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে বিগত কয়েক দিন ধরে। তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে নতুন বছরের পয়লা জানুয়ারি, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর মন্তব্যে সেই জল্পনার পারদ আরও চড়ল। সুব্রতের ‘ধারণা’, অভিষেক লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না! তাঁর ‘বিশ্বাস’, অভিষেক ‘যদি’ লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন, তবে দলের সর্বময় নেত্রী মমতাকে সামনে রেখেই লড়বেন তিনি।

ঘটনাচক্রে, তৃণমূল সূত্রে দাবি, দিন দুয়েক আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে অভিষেক জানিয়েছিলেন, লোকসভা ভোট-যুদ্ধে তিনি নিজেকে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন। তার পরেই বক্সীর এমন মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা বেড়ে গিয়েছে। প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে বক্সী বলেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্ব স্তরের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি।’’

অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনে দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে বেশ কিছু দিন ধরেই কিছুটা দূরে সরে ছিলেন অভিষেক। তা নিয়ে ঘরে-বাইরে তো জল্পনা চলছিলই। তার মধ্যেই সোমবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের কর্মী-সমর্থকদের আগামী আন্দোলনের জন্য তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে অভিষেক বলেছেন, ‘‘নতুন বছরে নব উদ্যমে আগামীর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব কর্মী-সমর্থকেরাই দলের মেরুদণ্ড। তাঁদের সকলকে কুর্নিশ।’’ দলের একাংশের বক্তব্য, নতুন বছরে লোকসভা ভোটের আগে অভিষেক যেখানে পরবর্তী আন্দোলনের জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিচ্ছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে সুব্রতের ভাষণে ‘যদি’ শব্দটি নিয়ে গোল বেধেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘সেনাপতি’ নিজেই লড়াইয়ে থাকার বার্তা দিচ্ছেন যখন, তা হলে ‘যদি’র প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে?

দলের অন্য একটি অংশের পাল্টা বক্তব্য, এর জন্য দলীয় কাজকর্ম থেকে ‘সেনাপতি’র দূরত্ব এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ মহল’ সূত্র যে সব কথা প্রকাশ্যে আসছে, তা থেকেই ‘যদি’র প্রশ্ন ওঠে। পুজোর আগে অভিষেক কেন্দ্র-বিরোধী যে আন্দোলনের ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন, পুজোর পর থেকে তা অনেকটাই মিইয়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গত শনিবার ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতারা অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রেই দাবি করা হয়েছে, অভিষেক সেই নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তিনি শুধু ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সক্রিয় রাখতে চান। নীতি নির্ধারণ বা সাংগঠনিক কাজ আগের মতো দেখার ক্ষেত্রে তাঁর ‘অপারগতা’ রয়েছে। ওই দলীয় সূত্রেরই দাবি, ঘনিষ্ঠ নেতাদের সামনে আরও কিছু কথা বলেছিলেন অভিষেক। তার মধ্যে অন্যতম, তিনি ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে আন্দোলনকে যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তার পর তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সরকারি বেশ কিছু আমলার ভূমিকা নিয়েও অভিষেক ‘ক্ষুব্ধ’। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে অন্তত লোকসভা ভোটে তিনি আর সেই সেনাপতির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অভিষেক।

দলের এই অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের প্রথম মিলেছিল গত ২৪ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে। যেখানে অভিষেক সশরীরে হাজির ছিলেন না। কয়েক মিনিটের জন্য ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই নানাবিধ কথা চলছিল। যদিও চোখের সমস্যার কারণেই অভিষেক ওই অধিবেশনে যেতে পারেননি বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি এবং দলনেত্রী মমতার সঙ্গে তাঁর ছবি না-থাকা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। সেই টানাপড়েন অচিরে ঘুরে যায় ‘নবীন-প্রবীণ’ দ্বন্দ্বে। যা কার্যত ‘নজিরবিহীন’ ঠেকেছিল দলের অনেকেরই কাছে। দলীয় সূত্রে খবর, একাধিক বার সেই জট কাটানোর চেষ্টা হয়েছে বটে, কিন্তু ‘সমাধানসূত্র’ বার হয়নি। দলের একাংশের আশা ছিল, নতুন বছরে প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই জটমুক্তি ঘটতে পারে। সোমবার মমতার পর অভিষেকের সমাজমাধ্যমের পোস্টে তার ইঙ্গিতও মিলেছিল। কিন্তু বক্সীর মন্তব্যে বিষয়টি আরও ‘পেকে’ গেল বলেই মনে করছেন অনেকে। অর্থাৎ, তৃণমূলের অভ্যন্তরে নানাবিধ কারণে যে মন্থন শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Abhishek Banerjee Subrata Bakshi TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}