প্রতীকী ছবি।
‘‘আমি তো নীচে অপেক্ষা করছি।’’ এক সংলাপেই যবনিকা পতন!
‘নীচে’ মানে মরুশহরের এক বহুতল আবাসনের নীচের চত্বর। ভিতরে পায়চারি করছেন কয়েক জন অচেনা যুবক। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন আরও কয়েক জন। একটি গাড়ি আসতে দেখে সতর্কবার্তা এল বাইরে থেকে। গাড়িটি ভিতরে ঢুকতেই যুবকদের এক জন পকেট থেকে একটি ছবি বার করে দেখলেন। মিলিয়ে নেওয়ার ভঙ্গিতে। তার পরেই যুবকেরা গাড়িটিকে ঘিরে ধরলেন। সেই গাড়িতে থাকা এক মহিলাকে নেমে আসতে বললেন তাঁরা।
ওই যুবকেরা আদতে পশ্চিমবঙ্গের ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক অফেন্স উইং (ডিইওডব্লিউ) এবং সিআইডি-র অফিসার। ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত শান্তিলাল সুরানার মেয়ে শুভিকা সুরানাকে এ ভাবেই নাটকীয় ভঙ্গিতে রাজস্থানের জয়পুরের একটি আবাসন থেকে গ্রেফতার করেছেন তাঁরা। পালিয়ে বেড়ানো শুভিকা ওই আবাসনে থাকা তাঁর মাকে ফোন করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মেয়ের ফোন পেয়ে মা অসতর্ক ভাবে বলে ফেলেছিলেন, ‘‘আমি তো নীচে অপেক্ষা করছি।’’ সেই সূত্রে আবাসনের ভিতর থেকে শান্তিলালের স্ত্রী প্রভাকেও গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা জানান, স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালানো হয়েছে। শুভিকাকে গোয়েন্দাদলের কেউ না-চিনলেও তাঁদের কাছে ছিল তাঁর একটি ছবি। সেটিই সুরানা-কন্যাকে চিনিয়ে দেয়।
তদন্তকারীরা জানান, গত এপ্রিলে শান্তিলালকে গ্রেফতার করে রাজ্যের ডিইওডব্লিউ। এখন তিনি জেলে। শান্তিলালের সংস্থার বিরুদ্ধে ১৩টি প্রতারণার মামলা রয়েছে ডিইওডব্লিউ-র হাতে। অভিযুক্ত শান্তিলালের স্ত্রী, মেয়ে-সহ ১০ জন। গত এপ্রিল থেকে খোঁজ মিলছিল না মূল অভিযুক্তের স্ত্রী এবং মেয়ের। এ বার গ্রেফতার করে তাঁদের ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হয়েছে। ধৃতদের শনিবার বিচার ভবনে বিশেষ আদালতে তোলা হয়। দু’জনের সাত দিন পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
সম্প্রতি খবর আসে, শুভিকা আছেন দিল্লিতে। নিয়ম অনুযায়ী রাতে পুলিশ কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করতে পারে না। তাই শুভিকা মূলত রাতের দিকেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। মোবাইল ও সিমকার্ডও বদলাচ্ছিলেন ঘনঘন। সিআইডি ও ডিইওডব্লিউ-এর অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি দল তৈরি করে দিল্লি পাঠানো হয়। গত বুধবার খবর আসে, শুভিকা সড়কপথে জয়পুর যাবেন। তাঁর পিছু নেয় একটি দল। বাকি সব দল দিল্লি থেকে উড়ান ধরে যায় জয়পুরে। আগে থেকে নির্দিষ্ট আবাসনে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকে। এক তদন্তকারী জানান, কলকাতা থেকে কেউ গিয়েছে, এটা অভিযুক্তেরা যাতে বুঝতে না-পারেন, সেই জন্য ওই আবাসনের গেটে ও ভিতরে স্থানীয় পুলিশকে রাখা হয়।
অভিযোগ, বিত্তশালী বয়স্কদের নিশানা করত শান্তিলালের সংস্থা। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করেছিল। ধৃত মা-মেয়ে ওই সংস্থার ডিরেক্টর বলে অভিযোগ। গোয়েন্দাদের দাবি, অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্তিলালের সংস্থা। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত চেয়ে পাননি অনেকে। প্রতারিতদের কয়েক জন বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy