Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
HS Examination

HS Result: পরীক্ষাই হল না ফেল কিসের! উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করানোর দাবিতে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ

স্কুলের আসবাবপত্র বার করে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং স্কুলে ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনাও সামনে এসেছে। বিক্ষোভ হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘিরে।

যশোর রোডে অবরোধের জেরে তীব্র যানজট।

যশোর রোডে অবরোধের জেরে তীব্র যানজট। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ২১:২৮
Share: Save:

মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শুরুতেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। ফল বেরোতেই তা নিয়ে বিক্ষোভ চরমে উঠল। কোথাও ইচ্ছাকৃত ভাবে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। তো কোথাও আবার অকৃতকার্য পড়ুয়ারা, মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন আপত্তি তুলছেন। তাঁদের দাবি, করোনা কালে যেখানে পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি, সেখানে পড়ুয়াদের ফেল করানো একেবারে যুক্তিহীন। আর তা নিয়েই দিন ভর উত্তপ্ত রইল গোটা রাজ্য। এমনকি সল্টলেকে সংসদের ভবনের বাইরে শনিবারও বিক্ষোভে শামিল হন বহু মানুষ।

বৃহস্পতিবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হয়। তাতে মোট পরীক্ষার্থীর ৯৭.৭০ শতাংশই উত্তীর্ণ হয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ইতিহাতে তা এমন পাশের হার নজিরবিহীন বলে সেইসময় মন্তব্য করেন সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস। কিন্তু ফল ঘোষণার পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দানা বাধে। রীতিমতো স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। অবিলম্বে পরীক্ষা নিতে হবে, নইলে অনুত্তীর্ণ সকলকে পাশ করিয়ে দিতে হবে, এমন দাবি নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন অভিভাবকেরাও।

স্কুলের আসবাব বার করে এনে চলছে ভাঙচুর।

স্কুলের আসবাব বার করে এনে চলছে ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার দিন ভর উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম-সহ একাধিক জেলায় দফায় দফায় বিক্ষোভে নামেন পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা। পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে পথ অবরোধ করেন পড়ুয়ারা। ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ চলে ডাকঘরের সামনেও। তার জেরে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় এলাকায়। ধাত্রীগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়ের ৫০ জন ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই বাংলা অথবা ইংরেজিতে পাশ নম্বর তুলতে পারেননি। তবে ছাত্রীদের প্রশ্ন, পরীক্ষাই হল না ফেল কীসের? তাঁদের অভিভাবকদের দাবি, অবিলম্বে পরীক্ষা নেওয়া হোক, নইলে সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্বাস না পেলে বিক্ষোভ উঠবে না বলেও জানিয়ে দেন তাঁরা। এর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কালনা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিক্ষোভরত ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষিকাদের আলোচনাতেও মধ্যস্থতা করে পুলিশ।

হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে আবার হাটাল বিশালাক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রছাত্রীরা। এ বছর ওই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১৭ জন। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন পাশ করতে পারেননি। শুক্রবার মার্কশিট বিলির সময়ই স্কুল চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। শনিবারও সকালে অভিভাবকদের সঙ্গে গিয়ে স্কুল ঘেরাও করেন সকলে। স্কুলের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল সংলগ্ন একটি রাস্তাও অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভকারীগদের অভিযোগ, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বোর্ডে সঠিক নম্বর না পাঠানোর জন্যই পাস করতে পারেননি তাঁরা। দীপ্তি ঘোষ নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে।’’

হাওড়ায় রাস্তায় ধর্নায় পড়ুয়ারা।

হাওড়ায় রাস্তায় ধর্নায় পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক গণেশ পাত্র জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা অকৃতকার্য হোন, স্কুলের কোনও শিক্ষকই তা চান না। সংসদের নিয়ম মেনেই নম্বর পাঠিয়েছিলেন তাঁরা কোথাও কোনও গাফিলতি হয়নি। তবুও পড়ুয়াদের হয়ে সংসদে আবেদন জানাবেন বলে জানান তিনি। সেই মর্মে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে পাশ করানোর আবেদন চেয়েছেন তিনি। তবে সংসদই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন গণেশবাবু।

বীরভূমের ইলামবাজার হাই স্কুলে আবার মার্কশিট না পাওয়া নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড শুরু হয়। ফল ঘোষণা হওয়ার পর দু’দিন কেটে গেলেও, মার্কশিট মেলেনি বলে দাবি ওই স্কুলের কমপক্ষে ২০ জন পড়ুয়ার। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও দেখা করার সুযোগ মেলেনি। বরং মার্কশিট চাইলে নতুন করে আবেদনপত্র জমা দিতে বাল হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পরের বছর মার্কশিট মিলবে বলে জানানো হয় স্কুলের তরফে। এউ নিয়েই শনিবার সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। তাতে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করলে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ইলামবাজারথানার পুলিশ। তাঁরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের।

পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভকারী এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘নতুন করে আবেদন পত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে। তাহলে নাকি পরের বছর মার্কশিট মিলবে! কিন্তু তাতে তো একটা বছর পিছিয়ে পড়ব আমরা! যথা সময়ে টাকা জমা দিয়ে আবেদনপত্র জমা করেছি। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, আমরা নাকি আবেদনপত্রই জমা দিইনি। এটা পুরোপুরি স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি।’’ কিন্তু গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইলামবাজার স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি প্রদীপকুমার মুখোপাধ্যায়। কিনি বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। নির্দিষ্ট সময়ে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। তার জন্য বার বার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অনেকেই তাতে কর্ণপাত করেননি। তাই মার্কশিট পাননি তাঁরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি, তাতে যদি কিছু করা যায়।’’

অন্য দিকে, পাশ করানো এবং নম্বর বাড়ানোর দাবিতে খড়্গপুরের ইন্দার কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতন স্কুলে কার্যত তাণ্ডব চালালেন পড়ুয়ারা। তার জেরে একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়াই বন্ধ হয়ে যায় শনিবার। স্কুলের ভিতর থেকে সমসত আসবাব বার করে এনে আগুন ধরিয়ে দেন পড়ুয়ারা। সেই সঙ্গে চলে ব্যাপক ভাঙচুর। কম নম্বর দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের পাশ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। করোনা পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দেখতে এলাকায় ভিড় উপচে পড়ে। বাধ্য হয়ে পুলিশে খবর দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারাই এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। খড়্গপুরের নিমপুরার আরজে বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীরাও মালঞ্চর মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। ঝাড়গ্রামে মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম রোডের উপর সেবায়তন এলাকাতেও পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। অকৃতকার্য সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়েও বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।

পূর্ব বর্ধমানে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ।

পূর্ব বর্ধমানে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

অকৃতকার্য সকলকে পাশ করানোর দাবি নিয়ে শনিবার বিক্ষোভে তেতে ওঠে মধ্যমগ্রামও। শুক্রবার মার্কশিট নিতে গিয়েই তার সূচনা হয়। পরীক্ষা না নিয়ে কী ভাবে অকৃতকার্য লিখে দেওয়া যায় মার্কশিটে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দাবি, হয় গোটা রাজ্যে সকল পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে হবে, নইলে অকৃতকার্য সকলকে পাশ করিয়ে দিতে হবে সংসদকে। শনিবার মধ্যমগ্রামের চারটি স্কুলের পড়ুয়ারা সম্মিলিত ভাবে বিক্ষোভে নামেন। অবরোধ করেন যশোর রোড। তাতে বিমানবন্দর এবং বারাসত-কৃষ্ণনগর যাওয়ার রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। এমনকি বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্সও আটকে পড়ে। সেগুলিকে বার করে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। তা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা বাছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষে বারাসতের এসডিপিও ঘটনাস্থলে আসেন। তাতেই অবরোধ ওঠে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy