Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কলেজে ভর্তি নাকি সব অনলাইনে! অফলাইনে ‘অফার’ চলছে ৪০ হাজারের

 নিজেকে ছাত্রনেতা বলে পরিচয় দেওয়া যুবকের ঝটিতি জবাব, ‘‘আপনার  সঙ্গে আমার কথাবার্তা পুরোটাই অফলাইনে।’’ সোমবার এই টুকরো ছবি উত্তর কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজের।

এ ভাবেই ফর্ম-পূরণ হচ্ছে জয়পুরিয়া কলেজের বিপরীতে। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই ফর্ম-পূরণ হচ্ছে জয়পুরিয়া কলেজের বিপরীতে। নিজস্ব চিত্র

 নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

‘‘বাণিজ্য বিভাগে অনার্সে পড়ার খরচ ৪০ হাজার টাকা! সাংবাদিকতা এবং ইংরেজিতে ৫০ হাজার। শুরুর সময়, তাই কম চাওয়া হচ্ছে!’’

‘‘এ বার ভর্তি, টাকা জমা পুরোটাই তো অনলাইনে!’’ নিজেকে ছাত্রনেতা বলে পরিচয় দেওয়া যুবকের ঝটিতি জবাব, ‘‘আপনার সঙ্গে আমার কথাবার্তা পুরোটাই অফলাইনে।’’ সোমবার এই টুকরো ছবি উত্তর কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজের। কলেজে গিয়ে টাকা দিয়ে ভর্তির ফাঁদ এড়াতে শিক্ষা দফতরের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে শেষ করতে হবে। একেবারে ক্লাস শুরুর দিনে পড়ুয়ারা কলেজ যাবেন। কিন্তু সোমবার কলকাতার কয়েকটি কলেজ ঘুরে দেখা গেল, স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশের পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি কোনও কোনও কলেজে।

১১টা নাগাদ জয়পুরিয়া কলেজের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক যুবক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কাউকে ভর্তি করাতে এসেছেন?’’ এক পড়ুয়ার অভিভাবক পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতেই ওই যুবক নিয়ে গেলেন, কলেজের উল্টো দিকের একটি বাড়ির একতলায়। প্লাইউড দিয়ে ঘরটিকে দু’ভাগ করা হয়েছে। ভিতরের ঘরে তিনটি টেবিলে ল্যাপটপ খুলে বসেছেন কয়েক জন। তাঁদের ঘিরে ভর্তি হতে চাওয়া পড়ুয়াদের ভিড়। যুবক বললেন, ‘‘আমার নাম স্বর্ণাভ ঘোষ। আমি কলেজের স্পোর্টস সেক্রেটারি। বাবাই বা রাহুল বললেই সকলে চিনবে। এখান থেকেই আপনার সব হয়ে যাবে।’’

বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি করাতে চাই বলায় যুবক বলেন, ‘‘জয়পুরিয়া কলেজ এ বার রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে প্রথম হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, রেপুটেশনের ব্যাপার। কম নম্বরে কিন্তু হবে না।’’ এর পর ছাত্রের সর্বোচ্চ চারটি নম্বরের যোগফল জানতে চেয়ে যুবকের দাবি, ‘‘এমনিতে হবে না! ইউনিয়নের কোটায় ১৪টি আসন আছে। তাতে ভর্তি করিয়ে দেব।’’ এর পর শুরু হয় ব্যাখ্যা, ‘‘ধরা যাক ৮৭ শতাং‌শ নম্বর পেয়ে কেউ মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েছেন। অন্য জনের ৮২ শতাংশ নম্বর থাকায় জায়গা হয়নি। কিন্তু, টাকা দিলে ৮৭ শতাংশের নাম কেটে সেখানে ৮২ শতাংশের নাম ঢুকে যাবে। এ জন্য ৪০ হাজার দিলেই হবে।’’

কিন্তু এত টাকা? যুবক বলেন, ‘‘আমার টাকাটা যদি ছেড়েও দিই, ৩৫ হাজার লাগবেই। আমরা যাঁরা ছাত্র ধরে দিই, তাঁরা পাঁচ হাজার করে রাখি।’’ বাকিটা? তাঁর দাবি, ‘‘ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারিই সব।’’ এর পর পরামর্শ, ‘‘পাসে ভর্তি করান। ২৫ হাজারে করে দেব।’’ অন্য বিষয়ে? ছাত্রনেতা বলেন, ‘‘সাংবাদিকতা, ইংরেজি— সব খুব গ্ল্যামারাস সাবজেক্ট। ওগুলো ৫০ হাজার করে পড়ে যাবে। বেশি মনে হলে, আমায় ২৫ হাজার দেবেন। নিজের দায়িত্বে জয়পুরিয়ার সান্ধ্য বিভাগে করে দেব!’’ এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

একই ভাবে টাকার বিনিময়ে ভর্তির আশ্বাস মিলল মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ এবং বিদ্যাসাগর কলেজে (দিবা)। সেখানে ছাত্রনেতা বলে পরিচয় দেওয়া যুবকদের দাবি, ‘‘অনলাইনে সব হলেও ইউনিয়নের কয়েকটি আসন থাকে। সেগুলিতেই ভর্তি করানো যাবে।’’ মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত বলেন, ‘‘সারা দিন কলেজে ছিলাম। এমন কিছুই দেখিনি।’’ আর বিদ্যাসাগর কলেজের (দিবা) অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডুর কথায়, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’ আর টিএমসিপির সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এমন ছাত্র আমাদের দলের কেউ হতেই পারেন না।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও এই ‘অফলাইন’ ব্যবস্থা চলছে কী ভাবে? পড়ুয়ারাই বা কেন ভিড় জমাচ্ছেন কলেজে?

অন্য দিকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, যাঁরা টাকা দিতে চান, গাধা হলে চান, তাঁরা গাধা হবেন। টাকা যদি কারও বেশি হয়ে থাকে, তিনি নর্দমায় ফেলবেন। এতে আমি কী করব? অনেকেই লটারিতে টাকা লাগান। এত বলা সত্ত্বেও কেউ যদি লটারিতে টাকা লাগান, আমি কী করব? আপনারা জোর করে লিখলে কী হবে! আমি একটা কলেজেও এটা হতে দেব না।

তথ্য সহায়তা: আর্যভট্ট খান

অন্য বিষয়গুলি:

College Admission Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy