(বাঁ দিক থেকে ডান দিক) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
কথায় বলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
পাশ করে সমাবর্তনে ডিগ্রি পাওয়ার পরেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও অবস্থাও যেন উলুখাগড়ার মতো বলেই শিক্ষামহলের একাংশের মত। গত রবিবার সমবর্তন শেষ হওয়ার পর থেকেই রাজভবন বার বার সেই সমাবর্তনকে যে ভাবে অনুমোদনহীন, অবৈধ বলে দেগে দিতে শুরু করেছে, তাতে পড়ুয়াদের মনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
রাজভবনের বক্তব্য, সমাবর্তনের ঠিক আগের দিন, শনিবার যে অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়েছিল রাজভবন, তাঁর সই রয়েছে পড়ুয়াদের সার্টিফিকেট বা শংসাপত্রে। রাজভবনের যুক্তি, সেটা অবৈধ। বিষয়টি বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে খতিয়ে দেখছে রাজভবন। এই সমাবর্তন এবং সমাবর্তনে দেওয়া ডিগ্রি সার্টিফিকেটের বৈধতার বিষয়ে ইউজিসির কাছেও রাজভবন জানতে চেয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এমনকি এই সমাবর্তন বাতিল করতে রাজভবন যে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথাও ভাবছে, তাও সোমবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, “এই সমাবর্তন অনুমোদনহীন, বেআইনি। আমার অগ্রাধিকার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত। আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। পড়ুয়াদের স্বার্থ কী ভাবে রক্ষা করা যায় দেখছি। এই সমাবর্তন কী ভাবে বৈধ করা যায় সেটাই এখন সব থেকে বড় সমস্যা।” রাজ্যপালের কথায়, “আমার কাছে ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রচুর প্রমাণ এসেছে। আমি চাইনি
এমন কলঙ্কিত কারও স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট ছাত্রছাত্রীরা পাক। তাই সরিয়ে দিয়েছি। আমি সমাবর্তন নিয়ে মামলা করতে পারি। জিততেও পারি। কিন্তু সেটা উদ্দেশ্য নয়। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থই এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’’
এই অবস্থায় যাদবপুরের মতো দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা সমাজের কৃতী পড়ুয়ারা ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম হওয়া ছাত্রী প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায় রবিবার সমাবর্তনে মেডেল, সার্টিফিকেট নিয়েছেন। এখন কলকাতার বাইরে চাকরি করেন প্রত্যুষা। সমাবর্তনে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন। যে ভাবে সমাবর্তন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল এবং এখনও যে পরিস্থিতি চলছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র মিলন ঘোষও সমাবর্তনে ডিগ্রি সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশে এই অনিশ্চয়তা। রাজ্যপালই অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে নিয়োগ করে সমাবর্তনের আগের দিন তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন। এটা ঠিক দায়িত্বপূর্ণ কাজ নয়।’’ কম্পিউটর সায়েন্সের অর্পন মণ্ডল-এর বক্তব্য, ‘‘যদি সত্যিই আবার নতুন করে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সেটা এক ধরনের হয়রানির সামিল হবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে তা মেনে নিতে হবে।’’
ইতিহাসের ছাত্রী শাঁওলি সমাজপতির কথায়, "তিন বছর পড়াশোনা শেষে পাশ করে আমরা এই ডিগ্রি সার্টিফিকেট অর্জন করেছি। এখন তা বৈধ কিনা এই প্রশ্ন উঠলে আমাদের পক্ষে তো খুবই অসুবিধা।" বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, "ছাত্র স্বার্থ আগে দেখতে হবে। যদি কোনও কারণে এই ডিগ্রি সার্টিফিকেট অবৈধ হয়ে যায়, তা হলে যত দ্রুত সম্ভব নতুন সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কেই করতে হবে।"
রাজ্য-রাজ্যপালের এই টানাপড়েনে পড়ুয়াদের হয়রানি হলে, তা কখনই কাম্য নয় বলে মনে করে শিক্ষামহলের একাংশও। তাদের দাবি, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে ভাবে আমন্ত্রিত হয়ে শহরে এসেও ইউজিসি চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমার এই বিতর্কের জেরে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেননি তার ফলও সুদূর প্রসারী হতে পারে বলে অনেকের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy