—ফাইল চিত্র।
স্কুল বন্ধ। প্রত্যন্ত গ্রামে অনলাইন ক্লাসের বালাই নেই। তাই গঙ্গাসাগর মেলায় এসে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দড়িতে চুম্বক লাগিয়ে সমুদ্রের তলায় পয়সা খুঁজছে ওরা।
এ ভাবে মেলায় পয়সা খোঁজা নতুন কিছু নয়। তবে এত দিন সেটা করতেন ওদের বাড়ির বড়রা। এ বার করোনার জন্য স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় সেই কাজে নেমে পড়েছে ওরাই। কিন্তু পুণ্যার্থী কম। তাই তেমন পয়সা দিতে পারছে না সমুদ্র।
স্কুল বন্ধ থাকলেও নতুন ক্লাসে উঠে পড়েছে এবং নতুন বইও পেয়ে গিয়েছে গঙ্গাসাগরের স্বামী কপিলানন্দ বিদ্যাভবন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সঞ্জীব সাহু। তা হলে সে কী করছে সাগরমেলায়? সঞ্জীব জানাল, স্কুল ছুটি। কোনও অনলাইন ক্লাস নেই। অখণ্ড অবসর। তাই বন্ধুদের নিয়ে চলে এসেছে পয়সা কুড়োতে। কেন নেই অনলাইন ক্লাস? সঞ্জীব বলে, ‘‘অনলাইন ক্লাসের কথা শুনেছি। কিন্তু ও-সব আমাদের এখানে হয় না। লাইন থাকে না। অনলাইন ক্লাস করার কোনও সরঞ্জামও নেই বাড়িতে।’’ গত দু’দিনে সমুদ্র থেকে ক’টাকা পেলে? ‘‘মাত্র দেড়শো টাকা। গত বার অনেক টাকা পেয়েছিল আমার দাদারা। তাঁরা মাছ ধরেন। লকডাউনে কাজ কমে গিয়েছে। সমুদ্র থেকে পাওয়া টাকা সংসারে লাগবে,’’ বলল সঞ্জীব।
শুধু অতিমারির বিপদ নয়, ঘূর্ণিঝড় আমপান তছনছ করে দিয়েছে বাড়িঘর। তার উপরে লকডাউনে কাজ বন্ধ। তাই কিছু রোজগারের আশায় নাতি তুফানকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রে পয়সা খুঁজতে এসেছিলেন আঙুরবালা গায়েন। সঞ্জীবের স্কুলেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে তুফান। ‘‘প্রতি বারেই মেলায় আসি। সমুদ্র থেকে পয়সা কুড়োই। নাতির স্কুল বন্ধ থাকায় এ বার প্রথম ওকে নিয়ে এলাম। সবই তো খুলে গেল। স্কুল কবে খুলবে বলতে পারেন,’’ জানতে চান আঙুরবালা। তুফান জানাল, নিয়মিত মিড-ডে মিলের চাল-ডাল মিলছে। নতুন ক্লাসের বইও পেয়েছে। কিন্তু পড়বে কার কাছে, জানা নেই তার।
দড়িতে চুম্বক লাগিয়ে পয়সা তুলতে তুলতে সপ্তম শ্রেণির আর এক পড়ুয়া শেখ মইদুল জানায়, বাবা কেরলে মজুরের কাজ করেন। বাড়িতে টাকার দরকার। ‘‘বৃহস্পতিবার সংক্রান্তির দিনই বেশি পয়সা পাইনি। আজ (শুক্রবার) ভাঙা মেলায় আর কী পাব,’’ মইদুলের গলায় হতাশা।
শুক্রবার ভোর ৬টা ৩ মিনিট পর্যন্ত শাহি স্নান চললেও এ দিন ভোরবেলা সমুদ্রের পাড়ে পুণ্যার্থীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। স্নানের আগে কাকা রাধেশ্যাম সিংহকে সর্ষের তেল মাখিয়ে দিচ্ছিলেন চার ভাইপো। এ দিন সমুদ্রে ডুব দিয়েই উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার দিকে রওনা হচ্ছেন তাঁরা। পুব আকাশে সূর্য তখন অনেকটা উঠে এসেছে। সাগরস্নানে এসে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। সাগরপাড়েই তাঁদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল বিদায় নেওয়ার পালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy