Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Fight

Sunita Chowdhury: বাড়িতে ছোট মেয়ে, মানুষ করার স্বপ্ন চোখে নিয়ে দইবড়া ফেরি করছেন স্নাতক সুনীতা

বিজ্ঞানে স্নাতক সুনীতা হাল ছাড়েননি। উল্টে, আজ তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি হয়ে উঠেছে হাল না ছাড়ার গান!

দইবড়া বিক্রিতে মগ্ন সুনীতা।

দইবড়া বিক্রিতে মগ্ন সুনীতা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৪০
Share: Save:

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। মুহূর্তে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল ১৭ বছরের ‘সাজানো’ সংসার। অত্যাচার থেকে মুক্তি মিললেও পেট চলবে কী করে? বিজ্ঞানে স্নাতক সুনীতা হাল ছাড়েননি। উল্টে, আজ তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি হয়ে উঠেছে হাল না ছাড়ার গান!

বর্ধমানের উদয়চাঁদ মহিলা কলেজ থেকে ২০০০ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক বর্ধমানের বাজে প্রতাপপুরের বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী। ইচ্ছে ছিল স্নাতকোত্তর করার। কিন্তু বাড়ির চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাঁকে। তার পর দীর্ঘ ১৭ বছরের বঞ্চনার ইতিবৃত্ত। যার শেষ মাস তিনেক আগে।

ঝাড়খণ্ডে স্বামীর বাড়ির লোকেদের অত্যাচারে সুনীতা যখন মেয়ের হাত ধরে একবস্ত্রে ফিরে এসেছিলেন বর্ধমানের বাড়িতে, তখন মাথায় মস্ত চিন্তা ছিল, কী ভাবে মেয়েকে বড় করে তুলবেন, কী ভাবেই বা নিজের পেট চলবে? বাবা, মা দু’জনেই মারা গিয়েছেন। তিন বোনের মধ্যে সুনীতা ছোট। দুই দিদির বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। তাহলে কী উপায়?

বরাবরই সাইকেল চালাতে ভালোবাসেন। বিপদের সময় সঙ্গী হয় সেই দু’চাকাই। নিজের হাতে দইবড়া তৈরি করে, শুরু হয় সাইকেলে তা ফেরি করে বেড়ানো। বাড়িতে ন’বছরের ছোট্ট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। তাই বাড়িতে মেয়েকে রেখেই প্রতিদিন মা বেরোচ্ছেন দইবড়া ভর্তি ঝুলি আর সাইকেল নিয়ে।

সকালে উঠে ঘরের কাজের পাশাপাশি, দইবড়ার জোগাড়যন্ত্র। ঘড়়ির কাঁটা একটু গড়াতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সুনীতা। সারাদিন শহরের পথে পথে ঘুরে পথচলতি মানুষকে খাওয়াচ্ছেন ঘরোয়া দইবড়া। দিনের শেষে বাড়ি ফেরা। ফিরেই আবার ঘরের কাজ, মেয়ের পড়াশোনা। ইদানীং দুপুরে সুনীতার দেখা মেলে বর্ধমান জেলা আদালত চত্বরে আর সূর্য পশ্চিম কোণে ঢলতে সুনীতা পৌঁছে যান টাউন হল এলাকায়। দিনের শেষে দৈনিক তিনশো থেকে চারশো টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি। এতে কোনওরকমে দিন চলে যায় মা, মেয়ের।

সুনীতা বলেন, ‘‘আমার দিদি খুব ভালো দইবড়া বানাতে পারতেন। দিদির কাছেই শেখা। এখন দিদির শেখানো দইবড়াই আমার সংগ্রামের সঙ্গী।’’ একেবারে ঘরোয়া স্বাদের দইবড়া। প্রতিদিন বিক্রিও হচ্ছে ভালই। মাসখানেকের মধ্যেই সুনীতার দইবড়ার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দশদিকে। কিন্তু এখনও অনেকটা পথ পেরোনো বাকি, তা জানেন বিজ্ঞানে স্নাতক লড়াকু সুনীতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Fight Bardhaman Fighter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy