আবু সুফিয়ানের (ইনসেটে) বাড়ি ঘিরে প্রতিবেশীদের কৌতূহল। মুর্শিদাবাদের কালীনগরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
পুলিশের গাড়ির মার্কামারা কালো বা সম্ভ্রম জাগানো সাদা রং নয়। কোনওটা ফিকে নীল, কোনওটা বা টুকটুকে লাল। মনে হবে শাদির মহরত সেরে ফিরছে। এনআইএ-র সাত গাড়ির কনভয় দেখে এমনই মনে হয়েছিল ডোমকলের স্থানীয় এক থানার বড়বাবুর। তবে গাড়ির সওয়ারিদের ক্ষিপ্রতা দেখে চমকে গিয়েছিলেন গ্রামীণ থানার ওই কর্তা। বলছেন, ‘‘চোখ কিন্তু চিলের মতো, ওই অন্ধকারেও প্রতিটা বাড়ি দেখেই চিনে ফেলছে!’’
কোনওটা ছুটেছিল জয়রামপুর, কোনওটা গঙ্গাদাসপাড়া। তিন গাড়ির যে কনভয়টা রানিনগরের কালীনগর গ্রামের দিকে তীব্র হেডলাইটের আলোয় ছুটছিল তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে প্রায় নাজেহাল অবস্থা স্থানীয় পুলিশ জিপের। স্থানীয় পুলিশের অনুমান, আবু সুফিয়ানের ঠিকানায় খুব দ্রুত পৌঁছে যেতে চেয়েছিল তারা, পাছে কোনও ভাবে পাখি উড়ে না যায়! শেষ রাতে ঘুমভাঙা বিভিন্ন গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটা বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেই গাড়ি থেকে নেমে প্রায় উড়ে গিয়ে বাড়িগুলি ঘিরে ফেলেছিলেন এনআইএ-র সদস্যরা। তার পরে এক জন বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লেও অন্যরা দরজা খোলার অপেক্ষা না করে টপকে গিয়েছিলেন পাঁচিল।
কালীনগরে আবু সুফিয়ানের পরিবারের লোকজন জানান, প্রথমে সদর দরজায় একটা শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় লাথি। ঘুম চোখে ওঠার আগেই ভেঙে ফেলা হয় খিল। আবু সুফিয়ানের ছেলে ওয়াসিম আক্রাম বলছেন, ‘‘আমরা তখনও বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী ঘটেছে। দরজা ভেঙে পুলিশ ঘরে ঢোকার পরেই আব্বুর নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকে। উঁকি দিয়ে দেখলাম, তখন বিছানায় আর নেই আব্বু। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বাড়ির পিছন থেকে আব্বুকে ধরে আনল, শুরু হল গালাগাল আর মার। আব্বু কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই এক জন তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে বলে, ‘আওয়াজ মত করো!’’ আবু সুফিয়ানের সম্পর্কে এক ভাই বলছেন, ‘‘গোয়েন্দারা আবুর বাড়িতে ঢোকার আগে আমাকে তুলে নিল বিছানা থেকে। ঝড়ের গতিতে টানতে টানতে নিয়ে গেল সুফিয়ানের বাড়ির সামনে। বাড়িটি চিনিয়ে দিতেই আমাকে বলল, ‘‘এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যাও!’’
আতিউর রহমানের পরিবারের এক সদস্য বলছেন, ‘‘রাজ্য সড়কের উপরে গোটা পাঁচেক গাড়ি রেখে ওরা টর্চ জ্বেলে এগিয়ে আসতে থাকল। যে দিকেই তাকাচ্ছি শুধু পুলিশ আর টর্চের ঝলকানি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আতিউরের ঘরে পৌঁছে গেল ওরা। গোটা ঘর তছনছ করে কাগজপত্র নিয়ে কলার ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে আতিউরকে নিয়ে গেল গাড়িতে। বলে গেল, ‘‘হমলোগ দিল্লিসে আয়ে হ্যায়, পুলিশ।’’
ধৃত মইনুল মণ্ডলের আত্মীয় দরজায় লাথি শুনে উঠেই দেখেন পাঁচিল টপকে উঠোনে নামছে কারা। তিনি বলছেন, ‘‘সটান মইনুলের ঘরের সামনে পৌঁছে গেল ওরা। হাতেনাতে ধরার পরে সবাইকে শোনাল টেলিফোনে মইনুলের কথোপকথন। তবে কাকে ফোন করেছিল সে, বুঝতে পারলাম না।’’ অভিযান শেষে ৬ অভিযুক্তকে নিয়ে সব ক’টি গাড়ি জলঙ্গির বিএসএফ ক্যাম্পে পৌঁছয়। তার পর রওনা কলকাতা়য়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy