শিল্পাঞ্চলে অবৈধ কয়লা নিয়ে যাতায়াত। ফাইল ছবি
কয়লা চুরি মামলায় প্রাথমিক চার্জশিটে যে ৪১ জনের নাম রয়েছে, তাতে অন্তত দশটি শিল্প-সংস্থার কর্ণধার বা মালিকের নাম রয়েছে— এমনই দাবি সিবিআই সূত্রের। পশ্চিম বর্ধমানের কল্যাণেশ্বরী, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বাঁকুড়ার বড়জোড়া এবং পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের ওই সংস্থাগুলি মূলত ছোট ইস্পাত কারখানা বা ‘রিফ্র্যাক্টরি’ ক্ষেত্রের। কয়লা চুরির ‘মাথা’ হিসেবে অভিযুক্ত লালার বেআইনি কারবারের সঙ্গে ওই সব সংস্থার যোগসূত্র তদন্তে উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, লালার লোকজন মূলত তিনটি জায়গা থেকে কয়লা চুরি করত। পশ্চিম বর্ধমানে ইসিএলের একাধিক বৈধ খনি এলাকা থেকে। অথবা, ইসিএলের ‘লিজ় হোল্ড’ (সংস্থার জমি, যার তলায় কয়লা আছে) এলাকায় অবৈধ খাদান তৈরি করে। তা না হলে, ইসিএলের কয়লা পরিবহণের জন্য তৈরি রেল সাইডিং থেকে। তদন্তকারীদের পর্যবেক্ষণ: কয়লা চুরির এই কেন্দ্রগুলি থেকে মোটামুটি পাঁচ-সাত কিলোমিটার ব্যাস এলাকার মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থাগুলি। ফলে, বেআইনি ভাবে তোলা কয়লা দূরত্বের সুবিধা নিয়ে ও ‘প্রভাবশালী-যোগ’ কাজে লাগিয়ে ‘ঝুঁকিহীন’ ভাবে ওই সব কারখানায় পৌঁছে দেওয়া হত বলে অভিযোগ।
বেআইনি জেনেও কেন ওই কয়লা ‘কিনেছেন’ সংস্থাগুলির মালিকেরা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক শিল্পোদ্যোগী দাবি করেন, বৈধ ভাবে ইসিএল, বিসিসিএল-সহ অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থাগুলির কাছ থেকে ‘কোটা’ বা নিলামে কয়লা কিনতে হলে টন পিছু পাঁচ থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হয়। সেখানে ‘চোরাই’ কয়লার দর টন পিছু ২১০০-৩৫০০ টাকা। বৈধ ভাবে কয়লার ‘কোটা’ (‘লিঙ্কেজ’) নিতে হলে ছোট রিফ্র্যাক্টরি, অনুসারী কারখানাগুলিকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু সে অপেক্ষার ফলে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়। এ দিকে, নিলাম ডেকে কয়লা কেনার প্রক্রিয়ায় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ছোট সংস্থাগুলি এঁটে উঠতে পারে না। ফলে, বৈধ কয়লা পাওয়ার ‘ঝক্কি’ থেকে বাঁচতে এবং অধিক মুনাফার লোভে চোরাই কয়লা কেনা অনেকটা সুবিধাজনক বলে মনে করতেন বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধারেরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে ওই দশ শিল্পোদ্যোগীকে সশরীর হাজিরা দিয়ে আত্মসমর্পণ করার জন্য ২৮ জুলাই সমনও পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ২০১২-র শেষ থেকে কয়লা চুরির জগতে লালার প্রবেশ। প্রথমে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, ভামুড়িয়া-সহ লাগোয়া এলাকায় কারবার শুরু হয়। পরে, ‘প্রভাবশালী’ যোগে জেলা, ভিন্-জেলা, এমনকি, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারেও এই কয়লা যেত। সে সব রাজ্যের কয়েক জন শিল্পোদ্যোগীও তাঁদের আতসকাচের তলায় রয়েছেন বলে দাবি সিবিআই-এর।
বিষয়টি জানাজানি হতেই সরব হয়েছে শিল্পদ্যোগীদের সংগঠনগুলি। ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানের বক্তব্য, “চোরাই কয়লা কেউ যদি কিনে থাকেন, আইন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এ ধরনের ঘটনা সামনে এলে, আখেরে শিল্পের পরিবেশই নষ্ট হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy