—প্রতীকী চিত্র।
দৃশ্যত তারা ফেরিওয়ালা। কলকাতার পথে পথে হরেক জিনিস ফেরি করে বেড়াত। কিন্তু তলে তলে চালিয়ে যেত ‘রেকি’ অর্থাৎ জেনে নিত বিভিন্ন এলাকার অন্ধিসন্ধি। সেই সঙ্গে সমানে চালিয়ে যেত ‘ফান্ড কালেকশন’ বা তহবিল সংগ্রহ! এবং নিজেদের জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ। রবিবার দুপুরে শহর থেকে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করার পরে এমনটাই দাবি কলকাতা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা ২টো নাগাদ হরিদেবপুর থানার এমজি রোড সংলগ্ন এলাকা থেকে তিন জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ধরা হয় তাদের। ধৃতদের নাম নাজিউর রহমান ওরফে জয়রাম ব্যাপারী (৩০), রবিউল ইসলাম (২২), মিকাইল খান (৩০)। তিন জনেরই বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায়। ধৃতদের কাছ থেকে একটি হাতে লেখা ডায়েরি, একটি মোবাইল, বেশ কিছু জেহাদি নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। ডায়েরিতে বেশ কিছু মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছে। নম্বরগুলির অধিকাংশই বাংলাদেশের। তবে এখানকারও বেশ কিছু নম্বর মিলেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অ্যাকাউন্ট ছিল ধৃত জঙ্গিদের।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ভারতে বেশ কিছু লোক ওই জঙ্গিদের সাহায্য করত। মূলত তহবিল ও সদস্য সংগ্রহেরই দায়িত্বে ছিল তারা। তবে নাশকতার উদ্দেশ্যে নিয়ে তাদের এ দেশে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। সত্যিই তাদের কোনও নাশকতার ছক ছিল কি না, থাকলে কোথায় কেমন নাশকতা, সেটা তদন্ত করে দেখছে এসটিএফ।
খাস কলকাতার বুকে বসে দিনের পর দিন ঘর ভাড়া নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ালেও এত দিন সেটা পুলিশের নজরে পড়ল না কেন, ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্নের মুখে পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিও।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, ধৃত তিন জঙ্গির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আজ, সোমবার তাদের আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে এসটিএফ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের কাছে ‘ভারতীয়’ পরিচয়পত্রও পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই সব পরিচয়পত্র তৈরি করতে এ দেশের কেউ কেউ তাদের সাহায্য করে থাকতে পারে। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই জঙ্গিরা বেশ কিছু দিন ধরেই কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে ছিল। তবে ধৃতেরা কত দিন আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিল এবং তাদের সঙ্গে আরও কেউ এসেছিল কি না, তা এখনও জানা যায়নি। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন জেহাদি কার্যকলাপের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, মূলত জিনিসপত্র ফেরি করার ছলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত ওই তিন জন। সেই সঙ্গে চলত এলাকা চেনার কাজ।
তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের মধ্যে নাজিউর জঙ্গি কাজকর্মের ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। মূলত সে-ই বাকি দু’জনকে নির্দেশ দিত। তার নির্দেশেই বাকি দু’জন জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য তহবিল সংগ্রহ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করত বলেই অনুমান। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ কাণ্ডেরসঙ্গে ধৃতদের কোনও যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, জঙ্গি সংগঠন জেএমবি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে জাল বিস্তার করতে চাইছে। খাগড়াগড় কাণ্ডেও ওই সংগঠনের হাত ছিল। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে আগেই জাল ছড়িয়েছে তারা। এর আগে একাধিক বার ওই সব এলাকা থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এসটিএফ) ভি সলোমন নিশাকুমার বলেন, ‘‘ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং সেই সব নথি থেকে জঙ্গি কাজকর্মের অনেক প্রমাণও মিলেছে। ধৃতদের সঙ্গে আরও কেউ কেউ যুক্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy