দশ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের দাম তিরিশ টাকা, কুড়ি টাকার স্ট্যাম্প পেপারের দাম পঞ্চাশ টাকা, পঞ্চাশ টাকারটা একশো এবং একশো বা দু’শো টাকারটা প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়। ছুটির দিন হোক বা বেচাকেনা বন্ধের পর, মোটা টাকা খসাতে রাজি থাকলে যে কোনও সময়ে মিলবে যে কোনও ধরনের স্ট্যাম্প পেপার। শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে স্ট্যাম্প পেপার বিক্রেতাদের একটা অংশ এই ভাবে গ্রাহকদের বিপাকে ফেলে সুযোগে বুঝে মোটা টাকা আদায় করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। আইনজীবী ও মুহুরিদের একাংশের অভিযোগ, কালোবাজারিদের দাপটে সকাল সাড়ে এগারোটার পর থেকে কোনও স্ট্যাম্প পেপার পাওয়া যায় না।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কোর্ট চত্বরের মুহুরি সংগঠন থেকে টাইপিস্ট সংগঠনের সদস্যরা। ক্ষুব্ধ আইনজীবীরাও। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কপূরকে একাধিকবার বিষয়টি জানানো হলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৃহত্তর আন্দোলনের নামার হুমকি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ফ্রিল্যান্স টাইপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জীবন মজুমদার। দু’দিন আগেই শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মহকুমাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যদিও মহকুমাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়। এ বিষয়ে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলব। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’
লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প বিক্রেতাদের একাংশ স্বীকারও করে নিয়েছেন এমন অভিযোগের কথা। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের কয়েকজন জানাচ্ছেন, এটাই এখানকার দীর্ঘ দিনের রীতি। প্রশাসনের লোকজনও অনেকেই তাঁদের কাছ থেকে এমন ভাবে স্ট্যাম্প কেনেন বলে দাবি। এক বিক্রেতাদের দাবি, ‘‘যে কোনও সময়ে ‘সার্ভিস’ দিই আমরা। তাই যখন খুশি সার্ভিস পেতে গেলে একটু বেশি টাকা তো খরচ হবেই।’’ এক বিক্রেতার কাছে গিয়ে বন্ধের দিনে পঞ্চাশ টাকার স্ট্যাম্প চাওয়া হয়। তিনি জানান, একশো টাকা লাগবে। কিন্তু দাম তো পঞ্চাশ! তার উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘একশোই দিতে হবে, না হলে স্ট্যাম্প দেওয়া যাবে না।’’ একশো টাকা দিতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে হাজির হন তিনি। এ ভাবে কালোবাজারি করা যে বেআইনি, তা জানলেও এটাই রীতি বলে তাঁর দাবি।
এই ধরনের কালোবাজারির পিছনে প্রশাসনিক মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন পশ্চিমবঙ্গ ফ্রিল্যান্স টাইপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক। তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসনের একাংশের মদতেই প্রকাশ্যে চলছে এই কালোবাজারি। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। প্রশাসন সব জেনেও নির্বিকার। মহকুমাশাসককে একাধিকবার জানিয়েছি। তাতে লাভ হয়নি। ফের জানাব। তাতেও কাজ না হলে আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’’
শিলিগুডি আদালত ল-ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সরকারের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘ দিন থেকেই এই কালোবাজারি চলছে। ক্রেতার ভিড় সামলাতে নতুন কিছু বিক্রেতাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বার অ্যাসোসিয়েশনের ঘরের সামনে বসেন। তাঁরাও অল্প দিনে এই কালোবাজারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের উচিত শক্ত হাতে এটি দমন করা।’’ বার অ্যাসোসিয়েশনে সম্পাদক চন্দন দে জানান, প্রতিদিনই এমন অভিযোগ পান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে বহু আন্দোলন করেছি, চিঠি দিয়েছি। দু’দিন আগেও মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে পদক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয়েছে। উনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ তবে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ছাড়া আর কোনও কাজ হয় না বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। তবে এ বার এই কালোবাজারি বন্ধ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy