মদন মিত্রের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ফাইল ছবি।
রোগী ভর্তি নিয়ে শুক্রবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে গন্ডগোলের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হল ভবানীপুর থানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগপত্রে রয়েছে মদন মিত্রের নামও। শনিবার সারা দিন ধরেই এসএসকেএমের ঘটনা নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। তার মধ্যেই জানা গেল, তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মদনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বাইক দুর্ঘটনায় আহত শুভদীপ পালকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি নিতে চাননি। মদন যাওয়ার পরেও ওই রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর সেখানে দাঁড়িয়েই মদন বলেছিলেন, দরকার হলে তিনি নিজের ঘড়ি-আংটি বিক্রি করে ওই যুবকের চিকিৎসা করাবেন। এমনও বলেছিলেন যে, সিপিএমের আমল হলে তিনি এক মিনিটে ওই যুবককে ভর্তি করিয়ে দিতে পারতেন! হাসপাতালের বিরুদ্ধে দালালরাজের অভিযোগ তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিও করেন। তবে ওই যুবককে ভর্তি নেওয়া হয়নি।
ওই ঘটনার পরেই শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হাসপাতাল চত্বরে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের পাশেই আছেন। উল্টে নাম না করে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগও করেছেন তিনি। মণিময় বলেন, ‘‘কাল রাতে হাসপাতালে যা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। ইচ্ছাকৃত ভাবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সদের হেনস্থা এবং গালিগালাজ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। আমি তাঁকে ঘটনার কথা বিস্তারিত জানিয়েছি। তিনি এ ক্ষেত্রে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলেছেন।’’ পাশাপাশিই, তিনি জানান, যে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে হামলা করলে সরকার ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে দোষীদের শাস্তি দেয়। এসএসকেএম হাসপাতালের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। কাল যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের সকলের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ দেখে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই মতোই মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ‘গুন্ডামি’র অভিযোগ করেছে শুনে মদনও পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেন শনিবার বিকেলে। তিনি বলেন, এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে রাজ্যের প্রতিটি সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে বাধ্য। মদনের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা যাবে না! আমি ওঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যিনি গতকাল (শুক্রবার) আহত হয়েছিলেন, তিনিও স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর পাশে দাঁড়াতেই আমি এসএসকেএমে গিয়েছিলাম। এতে যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে আমায় তাড়িয়ে দিন! চলে যাব। যা বলবেন মেনে নেব।’’ শুক্রবার রাতে এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন মদন। শনিবার দুপুরেও একই দাবি তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কেন সাসপেন্ড হবেন না? দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ট্রমা কেয়ারে সকলের জায়গা পাওয়ার কথা। মোদীর (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) বাপের বাড়ির কেউ আহত হয়ে এলেও ভর্তি করতে হবে! এটা পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টার।পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ট্রমা কেয়ার সেন্টার। কারও বাপের ট্রমা কেয়ার সেন্টার নয়! ওই ট্রমা কেয়ার সেন্টারে বাংলার মানুষের ঘাম-রক্ত লেগে আছে! অথচ ওই রোগীকে না দেখেই ওঁরা বলে দিয়েছিলেন, ভর্তি নেওয়া যাবে না।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘গুন্ডামি’র (হুলিগানিজ়ম) অভিযোগের প্রেক্ষিতে মদন পাল্টা বলেন, ‘‘যে নিজে পতিতা, সে-ই অন্যদের পতিতা বলে!’’
প্রসঙ্গত, বাম আমলে এসএসকেএম হাসপাতালে কার্যত মদনই ছিলেন শেষকথা। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও দীর্ঘ দিন মদনের সেই প্রতিপত্তি বজায় ছিল। সারদাকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে তিনি যখন অসুস্থ হয়ে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি, তখনও তিনি এসএসকেএম হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু তার পরে তাঁকে দলের তরফেই ওই হাসপাতালের ‘দায়িত্ব’ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের রোগী পরিচালন সমিতিতে আনা হয়েছিল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। পরে তাঁকেও সরিয়ে দিয়ে ওই দায়িত্বে আনা হয়েছে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। কিন্তু মদনের একটা ‘অলিখিত কর্তৃত্ব’ এখনও ওই হাসপাতালে রয়েছে বলে অনেকে বলেন। শুক্রবার রাতে সেই ‘কর্তৃত্ব’ জোর ধাক্কা খেয়েছিল। তা আরও জোরালো হয় শনিবার হাসপাতালের ডিরেক্টরের বক্তব্য। এ বার সেই এসএসকেএমই মদনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy